
মাহমুদুল হাসান মহিনের পরিকল্পনায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে হত্যা করা হয়। মহিনই অন্য আসামিদের ডেকে এনে সোহাগের ওপর হামলা চালায় এবং নৃশংসভাবে হত্যা করে। আর লম্বা মনির পূর্বের ক্ষোভ থেকেই সোহাগকে পাথর দিয়ে আঘাত করে। সোহাগ হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামিরা এসব কথা জানিয়েছেন। ঢাকার তিনটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা জানান লম্বা মনির, টিটন গাজী ও মো. আলমগীর।
তিন আসামি জবানবন্দিতে নিজেরা হত্যা পরিকল্পনায় ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। তারা মূলত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিনের নেতৃত্বে সেখানে যান। মহিনই হত্যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন। তারা বলেন, ভাঙারির ব্যবসাটা সোহাগ পরিচালনা করত। সোহাগের সঙ্গে আসামিদের কথা ছিল, সোহাগ ব্যবসা পরিচালনা করবে এবং মহিন-মনিরদের লাভের অংশ দেবে। কিন্তু সোহাগ লাভের অংশ দিচ্ছিল না। যে কারণে মহিন-মনির ওরা চাচ্ছিল সোহাগকে সরিয়ে দিয়ে ব্যবসাটা ওরা চালাবে। ঘটনার দিন সোহাগের সঙ্গে মহিন এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে সোহাগ ক্ষিপ্ত হয়। পরে এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন মহিন বাকিদের ডেকে নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে গেলে সোহাগকে তারা মারধর শুরু করেন। প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালের করিডরের ভেতরে পাথর দিয়ে সোহাগকে তারা মারতে থাকেন। পরে তাকে টেনে রাস্তায় আনা হয়।
জবানবন্দিতে লম্বা মনির বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সোহাগ আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে মারধর করেন। এ ঘটনার ক্ষোভ থেকে তিনি পাথর দিয়ে সোহাগের মাথায় আঘাত করেন। পূর্বের ক্ষোভ থেকে টিটন গাজী ও মো. আলমগীরও এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।
এছাড়া তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলমগীর সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে আঘাত করতে করতে তার দোকানের সামনে থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩নং গেটের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে টিটন গাজীসহ অন্যরা সোহাগকে হাতে থাকা লাঠি, পাথর, ইট দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে থাকেন। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর গেটের সামনে নিয়ে এলে টিটন গাজী মহিন ও টিটুর সঙ্গে ‘চাঁদাবাজের ঠাঁই নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন আসামিরা উল্লাস করতে থাকেন। এছাড়া লম্বা মনির সোহাগকে মাথার ওপর ইট দিয়ে ৪-৫টি আঘাত করেন।
এর আগে এই তিন আসামি রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে টিটন, আলমগীর ও মনিরকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম টিটনের, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম আলমগীরের ও ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ মনিরের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন মাহমুদুল হাসান মহিন, টিটন গাজী, মো. আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, তারেক রহমান রবিন, সজীব ব্যাপারী, মো. রাজিব ব্যাপারী, নান্নু কাজী, রিজওয়ান উদ্দীন ওরফে অভিজিৎ বসু। এদের মধ্যে ১২ জুলাই টিটন গাজীর পাঁচ দিন ও গত ১৩ জুলাই আলমগীর ও মনিরের চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। ১৪ জুলাই সজীব ও রাজিবের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১০ জুলাই প্রথম দফায় ও ১৫ জুলাই দ্বিতীয় দফায় মহিনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সর্বশেষ ১৬ জুলাই আসামি নান্নু, রিজওয়ান ও রবিনের সাত দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:১২:৪৬ ৩৪ বার পঠিত