
২২ মিনিট ধরে সিপিআর দেয়া হয়েছে। তাতেও কাজ না হলে তিন-তিনবার ডিসি শক দেয়া হয়। এরপর হার্ট সচল হয়েছে তামিম ইকবালের। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর থেকে সারা দেশ জুড়ে চলছে প্রার্থনা। অবশেষ তার হার্টে রিং পরানো হয়। দুপুরে জানা যায় কিছুটা শঙ্কামুক্ত। ২৪ ঘণ্টার আগে কোনো কিছুই বলা যাবে না সঠিকভাবে। গতকাল বিকেএসপি-৩ মাঠে মোহামেডান ও শাইনপুকুরের ম্যাচ শুরু হয় ৯ টায়। টসও করেন তামিম এরপর অসুস্থ বোধ করেন। এরপর পার্শ্ববর্তী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে মেডিকেল চেকআপ করাতে যান। চিকিৎসকরা মেডিকেল চেকআপ শেষ করলে তিনি কিছুটা বেটার ফিল করলে আবার বিকেএসপিতে ফিরে যান। পরবর্তীতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন তিনি হার্টঅ্যাটাক করেছেন। সেই সময় বিকেএসপিতে তার জন্য হেলিকপ্টার আনা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থা এতটাই গুরুতর হয়ে পড়ে যে, তাকে আর ঢাকা আনা সম্ভব হয়নি। সবশেষ দেশের এই সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফাইনাল আপডেট হচ্ছে, ও দ্রুতই রেস্পন্স করছে। সবকিছুই পজিটিভ। ২৪ ঘণ্টার আগে তো শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। তবে হি ইজ গেটিং বেটার। এখনো অফিশিয়ালি কিছু বলা যাবে না। রেসপন্স করছে সে উন্নতিও করছে।’
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তামিম ইকবাল। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে খেলছিল মোহামেডান ক্লাবের অধিনায়ক হয়ে। গতকাল ছিল ঈদের আগের তামিমের ঢাকা লীগে শেষ ম্যাচ। কিন্তু সেই ম্যাচ আর খেলা হয়নি তার। টস করেও মাঠে নামতে পারেননি বুকে ব্যথা অনুভব করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে বিকেএসপিতে প্রায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। মুখ থেকে ফেনাও বের হতে শুরু করে। সেই সময় ম্যাচ রেফারি দেব্রবত পাল তাকে হেলিকপ্টারে না উঠিয়ে নিয়ে যান ফের কেপিজি হাসপতালে। সেখানে চিকিৎসকরা প্রস্তত ছিলেন তামিমের সব রকমের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। প্রায় দুইঘণ্টা তারা অপ্রাণ চেষ্টা করেন। তার মধ্যে একবার তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেয়া হয়। পরে কেপিজি হাসপাতালের মিডিয়া ডিরেক্টর রাজীব তামিমের অবস্থা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে স্বস্তির কথা জানান। যদিও তখনো তামিম পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি তামিম ইকবাল আজ সকাল বেলা অসুস্থ হয়েছিলেন। ৯টা, সাড়ে ৯টার দিকে বিকেএসপিতে অসুস্থ হন। এখানে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা শুরু হয়। পরবর্তীতে আমরা চিন্তা করি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা। কিন্তু উনার অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়, এই গুরুতর অবস্থায় আমাদের কাছে আসেন। গুরুতর অবস্থা থেকে যতরকম চিকিৎসা দরকার সবই করা হয়েছে। আল্লাহ্র রহমতে উনার অবস্থা অনুকূলে আছে। উনার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এটার জন্য এনজিওগ্রাম করে এনজিওপ্লাস্ট ও স্টেন্ট করা হয়েছে। স্টেন্টিং খুব স্মুথ ও কার্যকরভাবে হয়েছে। এটা করেছেন ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ। উনার ব্লকটা পুরোপুরি চলে গেছে এখন। এখনো উনি পর্যবেক্ষণে আছেন, গুরুতর অবস্থা এখনো কাটেনি। এটা একটু সময় লাগবে। সবাই উনার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি।’
অন্যদিকে গতকাল বিসিবি’র ১৯তম কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হওয়ার কথা ছিল। সকালে বিসিবি সভাপতি তামিম ইকবালের হাসপতাল নেয়ার খবরটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সভা স্থগিত করে দেন। সেখান থেকে তারা ছুটে যান সভারের হাসপাতালে। সেখানে ছিলেন চাচা আকরাম খান সহ বিসিবি পরিচালক মাহবুবুল আনাম, মিডিয়া বিভাগের প্রধান ইফতেখার আহমেদ মিঠু সহ আরও অনেক পরিচালক। এরই মধ্যে পৌঁছে যান তার স্ত্রী ও বড় ভাই নাফিস ইকবালও। জানা গেছে- ৪৮ ঘণ্টা পার না হলে তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে- তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার তারা দেশের বাইরে নেয়ার অপেক্ষায় আছে। সভা স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিসিবি’র মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম। তিনি বলেন, ‘বিসিবি সভাপতি শোনা মাত্র সভা স্থগিত করেন। আমরা হাসপাতালে চলে যাই।’
বাংলাদেশ সময়: ৫:০০:৩৮ ১২৯ বার পঠিত