কাতারের আমির ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে আরব ও মুসলিম নেতাদের

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » কাতারের আমির ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে আরব ও মুসলিম নেতাদের
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫



ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে আরব ও মুসলিম নেতাদের

গাজা বিষয়ক সংলাপ বা আলোচনাকে ভণ্ডুল করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাতারে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। পক্ষান্তরে আরব বিশ্বকে ইসরাইলি প্রভাববলয়ে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। তিনি বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে আরব ও মুসলিম নেতাদের। তার ভাষায়, যে পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করার চেষ্টা করে, সে আলোচনাকে ভেস্তে দিতে চায়। তাদের জন্য আলোচনা কেবল যুদ্ধেরই একটি অংশ। আরব ও মুসলিম নেতাদের উদ্দেশে দোহা সম্মেলনে সোমবার এসব কথা বলেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি সরকার গাজার চলমান যুদ্ধকে ব্যবহার করছে দখলদারিত্ব বাড়াতে এবং স্থিতাবস্থা পাল্টাতে। আলোচনার বিষয়টি কেবল গাজায় তাদের সামরিক অভিযানের অজুহাত। যদি ইসরাইল হামাস নেতাদের হত্যা করতে চায়, তবে কেন তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে? প্রশ্ন রাখেন কাতারের আমির।

তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল তাদের জিম্মিদের ব্যাপারেও উদাসীন বরং শুধু নিশ্চিত করছে যে গাজাকে আর যাতে বসবাসযোগ্য রাখা না যায়। যদি সত্যিই জিম্মিদের মুক্তি চাওয়া হয়, তবে কেন আলোচক সবাইকে হত্যা করা হচ্ছে? এমন কাপুরুষ ও বিশ্বাসঘাতক দলের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্ক রাখা যায় না।

শেখ তামিম গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা আখ্যা দেন। কাতারের আহ্বানে আয়োজিত আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) যৌথ সম্মেলনের লক্ষ্য ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যেটি গাজায় যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় বন্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক আহ্বানের মুখোমুখি।

হামাস দাবি করেছে, গত সপ্তাহে দোহায় তাদের ওপর চালানো বিমান হামলায় শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন, যদিও ছয়জন নিহত হন। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়, যার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও আছেন। সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হয় ইসরাইলকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাধা দেয়ার জন্য সব ধরনের আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। এর মধ্যে আছে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা এবং তার বিরুদ্ধে আইনি মামলা শুরু করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জাতিসংঘে ইসরাইলের সদস্যপদ স্থগিত করার প্রচেষ্টায় সমন্বিত ভূমিকা রাখতে হবে। এতে ফিলিস্তিনি ইস্যুর প্রতি সম্মিলিত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়, জোরপূর্বক উচ্ছেদ, বসতি সম্প্রসারণ এবং অধিকৃত ভূখণ্ডে নতুন বাস্তবতা চাপিয়ে দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এছাড়া গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা, পুনর্গঠন এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণিত অবরোধ ও অনাহার কৌশলের জবাবদিহি দাবি করা হয়।

নেতারা আবারও স্পষ্ট করেন, টেকসই শান্তি কেবল আরব শান্তি উদ্যোগ ও জাতিসংঘ প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। সম্মেলনের পাশাপাশি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি)- যার মধ্যে কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত আছে, তারা নিজস্ব বৈঠক করে যৌথ প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করার ঘোষণা দেয়। জিসিসি যুক্তরাষ্ট্রকেও আহ্বান জানায় যেন তারা তাদের প্রভাব ব্যবহার করে ইসরাইলকে নিয়ন্ত্রণে আনে। জিসিসি মহাসচিব জাসেম মোহাম্মদ আল-বুদাইউই বলেন, আমরা আমাদের কৌশলগত অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও আশা করি তারা তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে ইসরাইলকে এই আচরণ বন্ধ করাতে। তাদের হাতে ইসরাইলের ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ আছে। এখনই সময় তা প্রয়োগ করার। মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কাতারই গাজা যুদ্ধকালে ইসরাইল-হামাস আলোচনায় মধ্যস্থতার নেতৃত্ব দিয়েছে।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সোমবার বলেন, ইসরাইলের বর্তমান পদক্ষেপগুলো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যেকোনো শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা ব্যাহত করছে। দোহায় আরব-ইসলামিক সম্মেলনে তিনি বলেন, এখন যা ঘটছে তা ভবিষ্যৎ শান্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে, আপনার নিরাপত্তা ও এ অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তা বিপন্ন করছে এবং নতুন শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা কমাচ্ছে এমনকি বিদ্যমান চুক্তিগুলোকেও ভণ্ডুল করছে।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও সম্মেলনে অংশ নেন। প্রায় ৬০ দেশের নেতাদের মধ্যে ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।

সম্মেলন শেষে যুবরাজ সালমান কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠান। তিনি লিখেছেন, জিসিসির সর্বোচ্চ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন ও জরুরি আরব-ইসলামিক সম্মেলনের ফলাফলের জন্য আমরা প্রশংসা জানাই। এই সম্মেলনগুলো কাতারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি ভঙ্গের যেকোনো প্রচেষ্টা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করি।

এদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার কাতারে হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরাইলি বিমান হামলার বিষয়ে জরুরি বিতর্ক আয়োজন করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার কাতারে পৌঁছার কথা। এর আগে তিনি ইসরাইলের হামাস নির্মূল প্রচেষ্টায় ‘অটল সমর্থন’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, রুবিও সফরে কাতারের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৬:৪৬   ৬৩ বার পঠিত  




আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


ইসরাইলি সামরিক আইনজীবীরা গাজায় যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সম্পর্কে সতর্ক করেন
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তুরস্কের
সরকারি শাটডাউন যুক্তরাষ্ট্রে শত শত ফ্লাইট বাতিল, ভোগান্তিতে মানুষ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ৮: ট্রাম্প
শাটডাউন অব্যাহত থাকলে বিমান চলাচল সীমিত করা হবে: মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী
দামেস্কের বিমানঘাঁটিতে সৈন্য মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
সুদানের গৃহযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে: জাতিসংঘ মহাসচিব
শব্দের চেয়ে তিনগুণ গতিসম্পন্ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা পুতিনের
গণহত্যার বেলায় শাহরুখ কেন চুপ?
সুদানের আল-ফাশারে গণহত্যার তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ