
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গণসংযোগের শুরুতেই বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীতে সংঘটিত সহিংস ঘটনা জনমনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম-৮ আসনে জনসংযোগ চলাকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। কারা, কেন এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া কতটা জরুরি।
বস্তুত নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ অপরিহার্য। কেবল নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন একা নয়, সামগ্রিকভাবে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি ভয়ভীতিমুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সরকারকেই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এ সময় সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত এড়াতে তাদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কোনো পক্ষের প্রতি নমনীয় না হয়ে আইনের চোখে সবাই সমান-এই নীতিতে কাজ করলে তাদের ওপর জনগণের আস্থা দৃঢ় হবে। বিশেষ করে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও অনস্বীকার্য। দলগুলোর উচিত হবে সংঘাতের পথ পরিহার করে নির্বাচনি বিধিমালা মেনে চলা এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের শান্ত ও সহনশীল থাকার নির্দেশনা দেওয়া। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা যেন কোনোভাবেই সহিংসতায় রূপ না নেয়, সেদিকে সব দলের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বকে নজর রাখতে হবে। সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবই পারে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তুলতে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নাগরিক সমাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে এবং যে কোনো অনিয়ম বা সংঘাতের ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরে প্রশাসনকে সতর্ক করতে পারে। উল্লেখ্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার।
স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শুধু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্যই নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা এবং সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো একটি চ্যালেঞ্জ হলেও সব পক্ষের সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা সম্ভব। নিরাপদ ও ভীতিহীন পরিবেশে ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা বিধান করাই এখন প্রশাসনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৬:৪৪ ৪ বার পঠিত