
গুমের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এছাড়াও রয়েছে কঠোর বিধান। এ সংক্রান্ত গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সভায় ২০২৬ সালের সরকারি ছুটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে জানানো হয়, আগামী বছর সরকারি ছুটি ২৮ দিন। এছাড়াও সভায় সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান।
প্রস্তাবিত আইনে গুম করার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে আলাদা গুম কমিশন হচ্ছে না। এখতিয়ার বেড়েছে মানবাধিকার কমিশনের। প্রেস সচিব বলেন, এই আইনের ফলে দেশে আর কোনো সরকার গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গুমকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আইন। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গোপন আটক কেন্দ্র, যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত, স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী, তথ্যদাতা ও সাক্ষীর নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চিতে স্পষ্ট বিধান রাখা হয়েছে। গুম-সংক্রান্ত ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ ও ভুক্তভোগী পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ তহবিল ও কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার গঠনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, আগের সরকারের আমলে বাংলাদেশে গুমের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছিল। গঠিত গুম কমিশনে প্রায় দুই হাজার অভিযোগ এসেছে। তবে কমিশনের সদস্যদের হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, দেশে অনেক মানুষ আছেন, যারা নিখোঁজ হওয়ার পর আর ফেরেননি। আবার কেউ কেউ ফিরে এসেছেন।
সরকারি ছুটি : ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। মোট ছুটি ২৮ দিন। এর মধ্যে ৯ দিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় মূল ছুটি হবে ১৯ দিন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত বছর ১৭ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫ সালের ছুটির তালিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ছুটি ছিল মোট ২৬ দিন। এর মধ্যে সাধারণ ছুটি ১২ দিন ও নির্বাহী আদেশের ছুটি ১৪ দিন। তবে সাধারণ ছুটির মধ্যে পাঁচ দিন এবং নির্বাহী আদেশের ছুটির মধ্যে চার দিনই সাপ্তাহিক ছুটি ছিল।
লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন : শফিকুল আলম বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, লজিস্টিক নীতিমালা কোনো আইন নয়। কিন্তু একটি নীতিমালা থাকলে সরকার তার কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারে। একটি দিকনির্দেশনা পায়। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতিমালা। এর ফলে দেশে সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানি খাত আরও ভালো হবে। শফিকুল আলম আরও বলেন, বাংলাদেশে আমরা যদি একটি পণ্য রপ্তানি করতে যাই, সেটা চট্টগ্রাম পোর্টেই কোনো কোনো সময় ১১ দিন পড়ে থাকে। শিপমেন্টে দেরি হয়। লজিস্টিক নীতিমালা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে পণ্য পরিবহণ এবং পণ্যের সরবরাহ দ্রুত সবার কাছে পৌঁছাবে। আমরা পণ্য রপ্তানিও খুব দ্রুত করতে পারব। ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলো আরও বেশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক হবে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালেও এমন একটি নীতিমালা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিকে সচিব পর্যায়ের একটি কমিটি পুনর্মূল্যায়ন করে দেখেছে, এটা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। এটার দুই তিন পৃষ্ঠাজুড়ে শেখ মুজিবের বন্ধনা ছিল। প্রেস সচিব বলেন, এই নীতিমালার মূল ফোকাস থাকবে রেলওয়ে এবং নৌ-পরিবহণের ওপর। বাংলাদেশে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের মতো নৌ এবং রেলওয়ের রুট আছে। কিন্তু আমরা এটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি না। এটার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই নীতিমালায় জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই নীতিমালার মাধ্যমে আমাদের লজিস্টিক্যাল বিষয়গুলো একটি ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের মধ্যে এসে পড়বে। এতে কাস্টমসের ফি ও ডকুমেন্টেশন যাতে রিয়েল টাইমে ডিজিটালি করা যায়, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৫:৩১ ৪ বার পঠিত