
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে লাথি দিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। জরুরি বিভাগের এক কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠেছে। চিকিৎসক এক রোগীকে লাথি মেরে আহত ও তার স্বজনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলার এজাহার দায়ের হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকও।
জানা গেছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা মো. মহসিন (৬৫) চিকিৎসা নিতে যান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তার স্বজনরা কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জানান, মহসিন কয়েকদিন আগে একই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেদিন তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবার ভর্তি করার অনুরোধ জানানো হয়।
তবে জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মাহবুব আলম মিলন রোগীকে ভর্তি না করিয়ে শহরের একটি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন। এ নিয়ে রোগীর পরিবারের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হলে ডাক্তার অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন মহসিনের স্ত্রী, মেয়ে ও ভাতিজিকে। একপর্যায়ে তিনি চেয়ারে বসা রোগীকে লাথি মেরে আহত করেন।
রোগীর স্বজন ও কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। ডাক্তারের লাথিতে রোগী মহসিনের বাম উড়ুতে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। তাকে নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার অভিযুক্ত ডাক্তারের বিচার দাবি করেছেন, মহসিন ও তার স্বজনরা।
আহত রোগী মো. মহসিন জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগে ভুগছি। এর আগে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকদিন ভর্তি থেকেছি সে সময় বাইরে থেকে ওষুধ কেনা ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হলেও কোনো সুফল পাইনি। সোমবার স্ত্রী, মেয়ে ও ভাতিজিকে সঙ্গে নিয়ে আবারও হাসপাতালে গেলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার মাহবুব আলম মিলন ভর্তি না করে শহরের ডিজিল্যাব নামের একটি ক্লিনিকে যেতে বলেন।’
এ নিয়ে আপত্তি করলে ডাক্তার মহসিন স্ত্রী ও মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি, ‘তুমি মুখ খারাপ করছ কেন?’ বলার পরপরই ডাক্তার চেয়ার থেকে উঠে এসে সজোরে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঘটনার পর মহসিনের ছেলে মো. শোলক বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নাছিরুজ্জামান বলেন, ‘মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক মাহবুব আলম দাবি করেন, ‘বিষয়টি এরমধ্যেই মীমাংসা হয়ে গেছে। রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তবে লাথি মারার ঘটনা ঘটেনি। থানায় করা অভিযোগও বাদী পক্ষ তুলে নিয়েছেন।’
এদিকে, চিকিৎসকের এ বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করেছেন মামলার বাদী মো. শোলক। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। এমনকি অভিযুক্ত চিকিৎসক তাদের টাকার প্রলোভন দেখাচ্ছেন।’
শোলক অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালে আমার অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে লাথি মেরে আহত করা হয়েছে এবং মা ও বোনকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৩:২৪ ১৩ বার পঠিত