
আফগানিস্তানের মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আটকে পড়া নারীরা বলেছেন, আমাদের কেউ দেখতে আসেনা। আফগানিস্তানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে পরিচালিত একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নারী বিষয়ক শাখাটি দেশের মানসিক রোগে আক্রান্ত নারীদের সাহায্য করার জন্য নিবেদিত। বিবিসি জনাকীর্ণ কেন্দ্রটিতে প্রবেশাধিকার পেয়েছিলো, যেখানে ১০৪ জন নারী রয়েছেন। ওই কেন্দ্রে বসবাস করেন এমন এক নারীর নাম মারিয়াম। তিনি পারিবারিক সহিংসতার শিকার বলে জানিয়েছেন। মরিয়াম ওই কেন্দ্রে ৯ বছর ধরে আছেন। তিনি বলেছেন, তার পরিবার তার ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার চালায়। এমনকি প্রতিবেশীদের বাড়িতে গেলেও তারা তার ওপর নির্যাতন চালায়। তার পরিবার চাইনি তিনি কখনো একা বাড়ির বাইরে যান। এক পর্যায়ে তার ভাইয়েরা অত্যাচার করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ফলে অনেক কম বয়স থেকেই তাকে সড়কে বসবাস করতে হয়। এরপর এক নারী তাকে দেখতে পান। মরিয়ামের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে ওই নারী তাকে কেন্দ্রে আনেন। নিজের দুঃখের কথা বলার সময়ও মারিয়ামের মুখে হাসি লেগে ছিলো।
তাকে প্রায়ই গান গাইতে শোনা যায়। কেন্দ্রের ভবনের আশেপাশে কাজ করতে দেয়া হয়েছে এমন কয়েকজন মানসিক রোগীর মধ্যে মারিয়াম অন্যতম। তিনি বর্তমানে সুস্থ এবং মানসিক কেন্দ্র ছাড়ার জন্য প্রস্তুত। তবে তার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। মারিয়াম বলেছেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে ফিরতে পারবো না। আমি কাবুলে কাউকে বিয়ে করতে চাই। কারণ, আমি যদি আবার আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাই তাহলে তারা আমাকে আবার ফিরিয়ে দেবেন। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের ওপর বিভিন্ন রকম কড়াকড়ি আরোপ করেছে। নারীদের সফর ও কাজের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে একজন পুরুষ সঙ্গী রাখতে হবে। দেশটির নারীরা বেশিরভাগই পুরুষদের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। ডরমিটরিতে বসে হাবিবা নামের এক এক নারী বলেন, তার স্বামী তাকে ওই মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেখে যান।
দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তার স্বামী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে ওই মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রেখে যান। মারিয়ামের মতো তারও যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তিনি ওই মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়তে প্রস্তুত। তবে তার স্বামী তাকে ফেরত নেবে না এবং তার বিধবা মারও তাকে চালানোর মতো অবস্থা নেই । হাবিবার তিন ছেলে বর্তমানে তাদের এক চাচার সঙ্গে থাকে। তারা প্রথম প্রথম হাবিবার সঙ্গে দেখা করলেও এ বছর হাবিবার সঙ্গে তাদের দেখা হয়নি। হাবিবা বলেন, আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে থাকতে চাই। কিছু রোগী বলেছেন, তারা ওই মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩৫-৪০ বছর ধরে আছেন। কাউকে তাদের পরিবার সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দিয়েছে। কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন না। তারা এখানে একা বসবাস করেন এবং এক পর্যায়ে এখানেই মারা যান। কয়েক বছর ধরে চলা যুদ্ধ অনেক আফগানদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে নারীদের ওপর। আফগানিস্তানে নারী অধিকারের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় তালেবান সরকারের উপ মুখপাত্র হামিদুল্লাহ ফিতরাত বলেছেন, তালেবান সরকার নারীদের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতার অনুমতি দেয়নি এবং তারা আফগানিস্তানে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘ থেকে প্রকাশিত একটি ডেটা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ৬৮ শতাংশ নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভয়াবহ। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আব্দুল ওয়ালি উতমানজি বলেছেন, আমাদের সমাজে মানসিক রোগ, বিশেষ করে অবসাদ খুবই সাধারণ। বলেছেন, বিভিন্ন প্রদেশ থেকে তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো রোগী দেখেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী। তারা মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই ভরণপোষনের জন্য পুরুষ সঙ্গী নেই। আরও বলেছেন, আমার রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশই পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৪৮:১৫ ১০৭ বার পঠিত