আল জাজিরা এক্সপ্লেইনার ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব সত্ত্বেও তলানিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক: এরপর কি?

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » আল জাজিরা এক্সপ্লেইনার ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব সত্ত্বেও তলানিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক: এরপর কি?
বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫



ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব সত্ত্বেও তলানিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক

জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে বেশ উচ্ছাস প্রকাশ করে ভারত। বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে যে কোনো হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগে দুই নেতাই উভয়ের পক্ষে বেশ জোরালো প্রচারণা চালান। যৌথভাবে বিভিন্ন সম্মেলনেও যোগ দেন তারা। নিজেদেরকে বন্ধু বলেও পরিচয় দিতেন। এর নজিরও স্থাপন করেন নরেন্দ্র মোদি। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম হোয়াইট হাউস সফর করেন। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই সেই চিত্র পুরো পাল্টে গেছে। কঠিন বাস্তবতার আঘাতে বিদ্ধ হয়েছে নয়াদিল্লি। তাদের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধির হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ রাশিয়ার তেল। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়ার ওপর চাপ দিতেই ভারতকে বারবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। কেননা দিল্লির সঙ্গে মস্কোর তেল বাণিজ্য বেশ ঘনিষ্ঠ। যা কোনোভাবেই মানতে নারাজ রিপাবলিকান নেতা।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য চুক্তি এখনও অধরা আর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক ঢালু পিচ্ছিল পথে অবস্থান করছে। গত এক দশকের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক এই প্রথম একদম তলানিতে ঠেকেছে। বাণিজ্য বিষয়ক অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর আল জাজিরাকে এসব কথা বলেন। ভারতের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।  কয়েক ডজন দেশের ওপর মার্কিন শুল্কারোপ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে ভারত। যার মধ্যে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও বাংলাদেশও রয়েছে। এই দেশগুলোর ওপর ভারতের তুলনায় কম শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বিচলিত মোদি। শনিবার এক জনসভায় তিনি ট্রাম্পের শুল্ক হামলার বিষয়ে প্রতিবাদী অবস্থানের কথা জানান। বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য আজ কঠিন শঙ্কাজনক স্থানে প্রবেশ করছে। যাতে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়ছে। মোদি বলেন, আমি যাই কিনি, সেখানে একটি মাত্রা থাকা উচিত, আমরা তাই কিনব যা ভারতীয়দের ঘামে তৈরি হয়েছে। এক ভারতীয় কর্মকর্তা কর্তৃক রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরপরই এসব মন্তব্য করলেন মোদি।

ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। সোমবার তিনি বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে কতজন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন তাতে তাদের (ভারতীয়দের) কিছু যায় আসে না। ফলে আমি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করব। এক্ষেত্রে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন উঠেছে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো এখন ভারত কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে রাশিয়াকে ছেড়ে দেবে? হয়তবা এসব বিষয় নিয়ে মোদি-ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা হতে পারে তবে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট। এগুলো বাণিজ্য চুক্তি থেকে শুরু করে কৌশলগত সমন্বয় পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে এ দুই দেশের সম্পর্কে মূল বিষয় হলো বাণিজ্য চুক্তি। যা কৌশলগত এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির চেয়েও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে বড় বাজার তৈরি করতে ক্রমাগতই চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে প্রযুক্তি, ওষুধ এবং কৃষি পণ্য রপ্তানিতে নিম্ন শুল্কহার এবং শক্তিশালী সুরক্ষা চায় ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ভারত নিজেদের শিল্প এবং কৃষকদের জন্য এসব প্রস্তাব ক্ষতিকর মনে করে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভারসাম্যহীনতা ছিল। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল অনেক। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির তুলনায় দেশটিতে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল দ্বিগুন। এই ঘাটতি কমাতে ভারতের ক্রমবর্ধমান বাজারে প্রবেশাধিকারের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যেহেতু দিল্লি মার্কিন বাজারেতাদের পণ্য রপ্তানি করছে। তাই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এপ্রিলে সকল দেশের ওপর শুল্ক আরোপের পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে ভারত। তবে ই-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল ডেটা প্রবাহ এবং মেডিকেল সরঞ্জামের মূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ঐকমত্যে না হওয়ায় সে আলোচনা বারবার থমকে গেছে। ১লা আগস্টের মধ্যে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি এড়ানোর চেষ্টা করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় দিলেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আসতে পারেনি তারা। ফলশ্রুতিতে নয়াদিল্লিকে ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি করেছেন ট্রাম্প। যা আরও বাড়তে পারে বলেও ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপ তৈরি করার একটি কৌশল। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক অনিল ট্রিগুনায়াত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যা চাচ্ছে অন্যান্য দেশের মতো ভারত তাদেরকে তা দেবে না, কেননা আমাদের কৃষি খাতকে রক্ষা করতে হবে। ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কথা উল্লেখ করে এ কথা বলেন তিনি। ভারতের অর্থনীতির প্রায় অর্ধেকটাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যা নিয়ে দেশটির সরকারই নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। অনিল আল জাজিরাকে বলেছেন, উভয় পক্ষই অনড় অবস্থানে রয়েছে, এখন তাদের উচিৎ পারস্পরিক উপকারী সমাধান।

(আল জাজিরা থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত)

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৮:১৫   ৫৯ বার পঠিত  




আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


সাঁজোয়া ট্রেনে চীনে পৌঁছালেন কিম জং উন
ইসরাইল সৃষ্ট অনাহারে আগস্টে ১৮৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সমকামিতা নিষিদ্ধ করলো বুরকিনা ফাসো, অপরাধ প্রমাণিত হলে জেল, জরিমানা
অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারতের নতুন তথ্য ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করেই সংঘাতের অবসান
ইসরাইলের জন্য আকাশ সীমা বন্ধ করলো তুরস্ক
কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ২১, ট্রাম্প বললেন ‘অবাক হইনি’
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ, মাইক্রোসফটের ৪ কর্মী বরখাস্ত
অস্ত্র প্রদর্শনীতে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করলো বৃটেন
গাজা শহরে হামলা শুরুর ঘোষণা ইসরাইলের
গাজার জেইতুনের সকল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরাইল

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ