জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচার ব্যবস্থাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

প্রথম পাতা » অন্তবর্তীকালীন সরকার » জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচার ব্যবস্থাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫



জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচার ব্যবস্থাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুমবিষয়ক কমিশন জানিয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের লক্ষ্যে প্রায়ই নির্যাতন চালানো হতো, যা তাদের এবং তাদের পরিবারের নাগরিক ও রাজনৈতিক জীবন বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি দেশের বিচারব্যবস্থাকেও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের যে সংস্কৃতি চালু ছিল তা এমনভাবে ব্যক্তিজীবনে প্রবেশ করেছিল যে অনেক পরিবার তাদের নিজ বাড়ির নিরাপদ পরিসরেও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বহুল ব্যবহৃত, স্ক্রিপ্ট-মাফিক ও জোরপূর্বক আদায় করা স্বীকারোক্তিগুলো অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে এমনভাবে বিকৃত করেছিল যে তা সত্য উদঘাটনের পরিবর্তে কেবল দোষী সাব্যস্ত করে সাজা নিশ্চিত করার একটি আমলাতান্ত্রিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল।’

এতে আরও বলা হয়, তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রতার অভাবের ফলে এসব স্বীকারোক্তি প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্য গ্রহণ কিংবা দায়িত্বে গাফিলতির জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যাওয়ার একটি ‘রেডি সমাধান’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় একটি মৌলিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়: এমনকি যখন চারপাশের পরিস্থিতি- যেমন বেআইনি আটক, নির্যাতন ও আইনজীবীর অনুপস্থিতি- প্রক্রিয়াগত লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়, তবুও সেই স্বীকারোক্তিগুলোই চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’

কমিশন জানায়, পূর্ববর্তী মামলাগুলোয় জামিন মঞ্জুর হলেও যেসব মামলায় হেফাজতে স্বীকারোক্তি ছিল, সেগুলোতে বিচারিক স্বস্তি লাভ অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছিল।

প্রতিবেদনটি উল্লেখ করে, ‘সার্বিকভাবে বিচারব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা সংস্থাকে ব্যবহার করে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের সরব নাগরিক সমাজকে দমন করতে চেয়েছিল।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বিরোধী, সাহসী সাংবাদিক, শ্রমিক নেতা, বিরোধী দলের আইনজীবী এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইরত লেখক ও সাধারণ মানুষদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, হয়রানি, চাপ প্রয়োগ, সাজানো মামলা, খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

বলা হয় প্রতিবেদনে, ‘এসব সাজানো মামলার বেশিরভাগই হতো নির্বাচনি সময়ের সাথে মিলিয়ে, যার ফলে ভিন্নমত দমন আরও তীব্র হতো।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউটর এবং বিচারকের ভূমিকাই মূল, কিন্তু যদি তদন্ত সংস্থা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আইনসম্মতভাবে তদন্ত না করে, তাহলে বিচারব্যবস্থার ক্ষতি অনিবার্য হয়ে ওঠে।

‘কারণ একটি ফৌজদারি মামলার ভিত্তি হলো তার চার্জশিট, আর যদি সেই ভিত্তি পক্ষপাতদুষ্ট তদন্তের কারণে দুর্বল হয়, তবে ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগই থাকে না।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্ত কর্মকর্তারা যদি নিষ্ঠা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা না করেন, তবে তা বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতায় পরিণত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন বিচারক ক্রিকেটের মাঠে আম্পায়ারের মতো। তিনি মামলার উভয় পক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করবেন- এটাই প্রত্যাশিত।’

এতে আরও বলা হয়, ফৌজদারি মামলার তিনটি স্তরে- তদন্ত সংস্থা (পুলিশ), কৌঁসুলি ও বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট- এই তিন শ্রেণির কর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ কাঠামো থাকা প্রয়োজন।

কমিশনের সুপারিশ, ‘যদি কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৬:৫২   ১৯ বার পঠিত  




অন্তবর্তীকালীন সরকার’র আরও খবর


জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচার ব্যবস্থাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে
ছয় মাসে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে অন্তর্বর্তী সরকার
উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার হলেও মামলা হয়নি: আসিফ নজরুল
পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন নয়: প্রধান উপদেষ্টা
পাচারের টাকা উদ্ধারে দেশ-বিদেশে মামলা করবে সরকার
মানুষকে মামলার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে কাজ করছি
অধ্যাপক ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকে জয়ী বাংলাদেশ: মির্জা ফখরুল
কেন নির্বাচিত সরকারের হাতে বিচারের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন না— যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
ওয়ারেন্ট না থাকায় আবদুল হামিদকে গ্রেপ্তার করা হয়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
২০২৬ সালের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ