
বারবার গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করছে ইসরাইল। রোববারও উপত্যকাটিতে হামলা চালিয়েছে দখলদার দেশটি। এদিন রাফা অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সৈন্যদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করা হয়েছে। তবে তেল আবিবের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস। ইসরাইলের ওই বিমান হামলায় অন্তত ৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরাইলের বিভিন্ন হামলায় মোট ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪৩ জন। এদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান এক খবরে বলেছে, কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইল কমপক্ষে ৪৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চুক্তি লঙ্ঘনগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণ, ইচ্ছাকৃত গোলাবর্ষণ ও লক্ষ্যভেদী হামলা, বেশ কিছু বেসামরিক ব্যক্তিকে আটক করা। যদিও যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও এ সবই ইসরাইলের আগ্রাসী নীতির ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। জাতিসংঘ ও যুদ্ধবিরতির গ্যারান্টি প্রদানকারী পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গাজার প্রশাসন। তারা বলেছে, অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে ইসরাইলকে চলমান আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করুন এবং নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা দিন।
এদিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, রাফাহ সীমান্ত শুধু তখনই পুনরায় খোলা হবে, যখন হামাস নিহত ইসরাইলি জিম্মিদের সব মৃতদেহ হস্তান্তর করবে। তার দপ্তর থেকে শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নির্দেশ দিয়েছেন রাফাহ ক্রসিং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এটি পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে হামাস তার প্রতিশ্রুতি কতোটা পূরণ করছেÑ অর্থাৎ জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ফেরত দেয়া এবং চুক্তির শর্তসমূহ বাস্তবায়নের ভিত্তিতে। শনিবার রাতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে দুই জিম্মির মৃতদেহ রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে হামাস। এর আগের দিন শুক্রবার গাজার একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের ১১ সদস্যকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছে গাজার সিভিল ডিফেন্স। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, নিহত পরিবারটি গাজার জয়তুন এলাকায় নিজেদের বাসায় ফেরার চেষ্টা করছিল। তখনই তাদেরকে বহনকারী বাসটিতে হামলা হয়। ইসরাইল দাবি করেছে, বাসটি নাকি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করেছিল। বাসাল বলেন, ওরা কথিত হলুদ রেখা অতিক্রম করেছিল। এটি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর তৈরি এক কাল্পনিক সীমারেখা। আমি নিশ্চিত পরিবারটি হলুদ ও লাল রেখার পার্থক্য বুঝতেই পারেনি। কারণ মাটিতে কোনো বাস্তব চিহ্নই নেই। গাজার সিভিল ডিফেন্স ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর যৌথভাবে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতদের মধ্যে সাতটি শিশু ও তিনজন নারী আছেন।
ইসরাইল ও হামাস উভয়েই পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে। ইসরাইল বলেছে, হামাস মৃত জিম্মিদের দেহ ফেরত না দেয়ার মাধ্যমে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। সোমবার হামাস শেষ ২০ জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেয়। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮ জন মৃত জিম্মির মধ্যে মাত্র ১২ জনের দেহ হস্তান্তর করেছে। জানিয়ে দেয় যে, বাকিদের উদ্ধার করতে বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। তুরস্ক এদিকে ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা মৃতদেহ উদ্ধারে সাহায্য করতে দুর্যোগ ত্রাণ বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠিয়েছে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উদ্ধার কাজ চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা এখন ৬৮,০০০ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৫:৪৬ ৫৬ বার পঠিত