বিদেশি চলচ্চিত্র দেখায় উত্তর কোরিয়াতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়: জাতিসংঘ

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » বিদেশি চলচ্চিত্র দেখায় উত্তর কোরিয়াতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়: জাতিসংঘ
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫



বিদেশি চলচ্চিত্র দেখায় উত্তর কোরিয়াতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়: জাতিসংঘ

বিদেশি চলচ্চিত্র ও টিভি ড্রামা দেখা এবং শেয়ার করায় মৃত্যুদণ্ড দেয় উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এ তথ্য। এতে বলা হয়, গত এক দশকে দেশটির রাষ্ট্রযন্ত্র নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি দিকের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করেছে। যা বর্তমান পৃথিবীতে নজিরবিহীন ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে ওই রিপোর্ট। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে উত্তর কোরিয়ার জনগণ আরও নিপীড়ন, ভয় ও দুঃসহ জীবনের শিকার হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এতে বলা হয়, প্রতিবেদনটি গত ১০ বছরে দেশটি থেকে পালিয়ে আসা ৩০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছেÑ ২০১৫ সাল থেকে অন্তত ছয়টি নতুন আইন কার্যকর করা হয়েছে, যার আওতায় এসব মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিদেশি মিডিয়া কনটেন্ট দেখা বা প্রচার করা। ২০২০ সালের পর থেকে এ ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। পালিয়ে আসা এক তরুণীর নাম কাং গিউরি। তিনি জানান, তার তিন বন্ধুকে কোরিয়ান নাটক দেখার অপরাধে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এমনকি ২৩ বছর বয়সী এক বন্ধুর বিচার দেখতে গিয়ে তিনি দেখেছেন বিদেশি কনটেন্ট দেখা ও মাদক পাচারÑ দুই অপরাধকেই সমানভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

২০১১ সালে কিম জং উন ক্ষমতায় আসায় নতুন করে আশাবাদী হয় সেদেশের জনগণ। কারণ কিম প্রতিশ্রুতি দেন যে ‘পেট মোটা করে আর বেল্ট বাঁধতে হবে না’। অর্থাৎ, খাদ্যের অভাব থাকবে না। কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিত্যাগ করে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের দিকে ঝুঁকলেন। এর ফলে দেশের মানুষের জীবনের মান ও মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

রিপোর্টে উঠে এসেছে, কোভিড মহামারির সময় খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছায় এবং বহু মানুষ অনাহারে মারা যায়। বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে আরও কঠিন। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এতটাই কড়াকড়ি করা হয়েছে যে, চীন সীমান্ত দিয়ে পালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পালাতে চেষ্টা করলে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার এখন আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করছে। ‘শক ব্রিগেড’ নামে পরিচিত এই দলগুলোতে দরিদ্র পরিবারের মানুষদের দিয়ে কঠিন নির্মাণ বা খনির কাজ করানো হয়। এসব শ্রমিক কাজের বিনিময়ে সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার আশা করলেও বাস্তবে অনেকে মৃত্যুবরণ করে। তবে এসব মৃত্যু নিয়ে সরকার শোক প্রকাশ না করে আত্মত্যাগ হিসেবে দেখায়।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, এসব কঠিন শ্রমে এতদূর গেছে যে হাজার হাজার অনাথ ও পথশিশুকেও এতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল, তার রিপোর্টে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তখন দেখা যায়, দেশটির রাজনৈতিক বন্দিশিবিরে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। সেখানে মানুষকে আমৃত্যু বন্দি করে রাখা হয় এবং অনেকেই নিখোঁজ হয়ে যায়। ২০২৫ সালের এই নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, অন্তত চারটি রাজনৈতিক বন্দিশিবির এখনও চালু আছে। সাধারণ কারাগারগুলোতেও বন্দিদের উপর অত্যাচার, জোরপূর্বক শ্রম এবং অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে সামান্য কিছু জায়গায় সহিংসতা কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তোলার আহ্বান জানিয়েছে। তবে তা করতে হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন, যেখানে চীন ও রাশিয়া বারবার ভেটো প্রয়োগ করে আসছে।গত সপ্তাহেই কিম জং উন বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেন, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে উত্তর কোরিয়ার দমননীতি ও পারমাণবিক কর্মসূচিতে এই দুই দেশের পরোক্ষ সমর্থনের ইঙ্গিত। জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়া সরকারকে রাজনৈতিক বন্দিশিবির বিলুপ্ত করা, মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বন্ধ করা এবং মানবাধিকার শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভলকার তুর্ক বলেন, আমাদের প্রতিবেদনে স্পষ্টতই দেখা যায়- দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:০৬:৪৬   ১ বার পঠিত  




আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


বিদেশি চলচ্চিত্র দেখায় উত্তর কোরিয়াতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়: জাতিসংঘ
নেপালে বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১, এখনও পলাতক ১২ হাজার ৫৩৩ কয়েদি
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্টকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দিলেন আদালত
নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি সুশিলাকে চায় তরুণরা
কাতারে ইসরাইলি হামলার পর কূটনীতি ধ্বংসস্তূপে
বৃটেনে সফররত ইসরাইলি প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা
যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় কাতারে হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা ইসরায়েলের
তহবিল সংকটে বন্ধ হচ্ছে ভারতের ৬০ বছর পুরনো পারসি ম্যাগাজিন
তামিলনাড়ুতে নারীকে গাছে বেঁধে প্রহার, পোশাক খোলার চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ