
জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’-এ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যার পর থেকেই উত্তপ্ত ছিল রাজধানীসহ সারাদেশের রাজপথ ও বিভিন্ন এলাকা।
বুধবার (১৬ জুলাই) বাংলামোটরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এনসিপি’র ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা।
হামলাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও ১২ দলীয় জোটসহ একাধিক রাজনৈতিক দলও।
এনসিপির কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বহীনতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি, সমাবেশ মঞ্চ ভাঙচুরসহ দমন–পীড়নের নিন্দা জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। দিনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে জামায়াত আমিরকেও।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলা করেছে।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। নেতারা বলেছেন, এই ন্যক্কারজনক হামলা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন। এ দেশে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা এখন সময়ের দাবি।
এদিন সন্ধ্যা ৭টা বাংলামোটর এলাকায় অবস্থান নেন এনসিপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা। এরপর মশাল হাতে মিছিল নিয়ে যান কারওয়ান বাজারের দিকে। তাদের কণ্ঠে শোনা যায় নানা প্রতিবাদী ও বিপ্লবী স্লোগান।
শাহবাগে প্রতীকী ব্লকেড কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘ছাত্র শক্তি’। আওয়ামী লীগ সমর্থিত পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় এই হামলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি নেতাদের। প্রতীকী কফিন ও মশালমিছিল করেছে ‘জুলাই ঐক্য’।
এদিকে, শাহবাগে সংবাদ সম্মেলনে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হলে সারাদেশে তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আলাদা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। ভিসি চত্বর ঘুরে টিএসসিতে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন নেতা–কর্মীরা। এসময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।
একই সময়ে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং কক্সবাজারে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার হামলায় স্থানীয় বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার নিহত হওয়ার অভিযোগে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করে ছাত্রদল। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান নেতারা।
এদিন রাজধানীর পাশাপাশি এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ব্লকেড করেছে ছাত্র-জনতা। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
তবে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ব্লকেড সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সড়ক থেকে ব্লকেড সরিয়ে নিয়ে রাজপথের একপাশে অবস্থান করুন।
বিকেলে মানিকগঞ্জের জাগীর এলাকায় প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন এনসিপি নেতাকর্মীরা। আধা ঘণ্টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
নোয়াখালীর মাইজদীতে বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পটুয়াখালীতেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। রাত ৮টার দিকে শহরের তিতাস সিনেমা হল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌরসভার মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
প্রসঙ্গত, গোলাপগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে ঘিরে দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল সূত্র নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিহতরা হলেন দীপ্ত সাহা, রমজান কাজী, সোহেল ও ইমন তালুকদার। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫১:০৬ ২৫ বার পঠিত