সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ যখন পবিত্র রমজান পালন শেষে ঈদের আনন্দে, তখন গাজার এই শিশুরা জীবন বাঁচাতে একটু খাবারের জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। তাদের কারো পিতা নেই। কারো মাতা নেই। ভাইবোন নেই। একেবারে এতিম। আল্লাহর দয়া আর মানুষের করুণার ওপর ভর করে বেঁচে আছে তারা। একবার ভাবুন তো এই শিশুদের ঈদের কথা! তাদের জীবনে ঈদ মানে কি আনন্দ? তাদের কাছে ঈদ মানে মুক্তি, স্বাধীনতা। বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। একটুকরো স্বাধীন জন্মভূমি। সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করে গণহত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পবিত্র ঈদের দিনেও রক্ষা পায়নি গাজা আর এর শিশুরা। আজ সেখানে ঈদুল ফিতর। এর মধ্যেই সেখানে বোমা হামলা চালিয়েছে জায়নবাদী ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আবার ৫ জনই শিশু।
ওদিকে মিশর ও কাতার নতুন একটি যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। হামাস তা গ্রহণ করার কথা বলার পর নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বলা হয়েছে, তারা একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে।
ওদিকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, তাদের হাতে যে পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে তাতে গাজায় মাত্র ১০ দিনের সরবরাহ দেয়া সম্ভব। এর মধ্যে ইসরাইলের অব্যাহত অবরোধ তুলে না নিলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। হাজার হাজার মানুষের কোনো খাবার থাকবে না। গাজায় এরই মধ্যে পুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে যে ইর্মাজেন্সি মজুদ আছে তা মাত্র ৪১৫০০০ মানুষের পুষ্টি বিষয়ক বিস্কুট। এ অবস্থায় বেসামরিক লোকজনের প্রয়োজন পূরণে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক কর্মী ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রালয়ের হিসাবে ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০,২৭৭ জন ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ১১৪০৯৫। অন্যদিকে গাজার মিডিয়া অফিস প্রায় দুই মাস আগে বলেছে, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬১,৭০০। হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। অনলাইন আল জাজিরা বলছে, দখলীকৃত পশ্চিম তীরের তাম্মুন শহরে ২২ বছর বয়সী একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলিরা। এ হত্যার কথা নিশ্চিত করেছে ইসরাইল। তাদের অভিযোগ, ওই ব্যক্তি ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাবেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
ওদিকে গত ২৪ ঘন্টায় লোহিত সাগরে তিন দফা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ হ্যারি ট্রুম্যানে হামলা চালিয়েছে হুতিরা। তারা বলেছে, শত্রুদের যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে তাদের যোদ্ধারা হামলা করেছে। টেলিগ্রামে হুতির এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় আগ্রাসন বন্ধ ও অবরোধ তুলে না নেয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনি নিষ্পেষিত জনগণের অধিকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন থেকে কোনোভাবে পিছপা হবে না তারা।
ওদিকে পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইয়েমেনে হুতি নেতা আবদুল মালিক বদর আল দিন আল হুতি। তিনি পবিত্র ঈদের দিনে গাজায় ইসরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য এবং তাদের সুরক্ষার জন্য সব সময় দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন দিয়ে যাবেন ইয়েমেনের মানুষ।