
ইসরাইলের হাতে প্রায় ৬ মাস ধরে আটক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন কিশোর মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৬)। তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পরিবার। কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই তাকে আটকে রেখেছে ইসরাইল। অভিযোগে বলা হয়েছে, সে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতিস্থাপনকারীদের দিকে পাথর ছুড়েছে। কিন্তু ইব্রাহিমের পরিবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার অবনতিশীল স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে তারা।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। মোহাম্মদ ইব্রাহিম ফিলিস্তিনি-মার্কিনি নাগরিক। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার করার পর থেকে তাকে পরিবারের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। কোনো সাক্ষাৎ বা ফোনকলের অনুমতি নেই বলে জানিয়েছেন তার পিতা ও চাচা। পরিবারের হাতে থাকা এবং আল জাজিরার দেখা একটি ইসরাইলি সামরিক জিজ্ঞাসাবাদ ভিডিওতে দেখা গেছে, মোহাম্মদ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছে যে- সে কোনো যানবাহনের দিকে পাথর ছুড়েছে। তার পিতা জাহের ইব্রাহিম বুধবার বলেন, আমরা শুনেছি মোহাম্মদের ওজন দ্রুত কমছে।
তার ত্বকে সংক্রমণ হয়েছে। আমরা খুব ভয় পাচ্ছি। যখন তাকে দেখতে পারছি না, কথা বলতে পারছি না- তখন কী বুঝবো? আমরা জানিই না সে বেঁচে আছে কি না। পরিবার জানায়, গ্রেপ্তারের কয়েক সপ্তাহ পর মার্কিন কর্মকর্তারা মোহাম্মদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। কিন্তু জুলাই মাসে পাওয়া এক ইমেলে কনস্যুলার কর্মকর্তা জানান, তারা তার কাছে আগে প্রবেশাধিকার পাননি। ইমেলে বলা হয়, ইসরাইলি কারাগার কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, আপনার ছেলে স্ক্যাবিসে আক্রান্ত এবং তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমরা তার সুস্থতার অগ্রগতির বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য চেয়েছি। উল্লেখ্য, স্ক্যাবিস হলো এক ধরনের ত্বকজনিত সংক্রমণ।
এতে ভয়াবহ চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ইমেলের শেষে লেখা আছে, আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহ বা তার পরের সপ্তাহে তাকে দেখতে পাব, যখন সে কিছুটা সুস্থ হবে।এ বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর আল জাজিরার মন্তব্যের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মোহাম্মদের মামলা নিয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়, গোপনীয়তার কারণ দেখিয়ে। তারা লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে আর কিছু নেই। কেউ বিদেশে আটক হলে আমরা কনস্যুলার সহায়তা দিই- যার মধ্যে চিকিৎসা, ওষুধ এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত করার বিষয় অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরাইলকে বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য দেয় এবং ২০২৩ সালে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেই সহায়তা আরও বেড়েছে।
ইব্রাহিমের পরিবার জানায়, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ভোরে ইসরাইলি সেনারা রামাল্লাহর উত্তরে আল-মাজরা আশ-শারকিয়া গ্রামে মোহাম্মদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে পাথর নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, তার আদালতের শুনানি বারবার স্থগিত করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য দ্রুত খারাপ হচ্ছে। তার পিতা বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছি, হয়তো নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪২:৩৯ ৪৪ বার পঠিত