বনের জমিতে বাউন্ডারি, শহীদের সাম্রাজ্য

প্রথম পাতা » অপরাধ » বনের জমিতে বাউন্ডারি, শহীদের সাম্রাজ্য
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫



বনের জমিতে  বাউন্ডারি,  শহীদের সাম্রাজ্য

শহীদুল ইসলাম শহীদ। লোকে বলে বাউন্ডারি শহীদ। কেউ বলে বন শহীদ। ঘোরেন দলবল নিয়ে। আছে নিজস্ব মোটরসাইকেল বাহিনী। এই বাহিনী নিয়ে যখন যেখানে খুশি ত্রাস সৃষ্টি করেন। গাড়ি শোডাউন, হামলা, মারধর, ঝুট ব্যবসা ও জমি দখল তার নিত্যদিনের কাজ। এলাকায় বনখেকো বলেও শহীদের বেশ সুপরিচিতি রয়েছে। বনের যে জমি পছন্দ হয়, সেখানেই বাউন্ডারি দেন শহীদ। পরে রাতারাতি স্থাপনা গড়ে নিজের জমি দাবি করে বসেন। নিরুপায় বন কর্তারাও খুব বেশি কিছু করার সাহস পান না। আবার কিছু বিট অফিসারও তার দখলবাজির হাতিয়ার। বন থেকেই শহীদের জীবনে নাটকীয় উত্থান হয়। অল্প সময়ে বনের শত একর ভূমি বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন তিনি। তিনি দখল করেই থেমে থাকেননি। বনের জমিতে গড়েছেন তেলের মিল, সোয়েটার ফ্যাক্টরি, চা বাগান, ফার্ম ভ্যালি, গলফ কোর্ট, সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, বাংলো বাড়ি, প্যাকেজিং কারখানা, কাঁচা বাজার ও শতাধিক প্লট। ভূমি বাণিজ্য করে শুধু ভালুকায় নয়, ঢাকার উত্তরায় একাধিক বাড়ি, গুলশানে ফ্ল্যাট-প্লট কিনেছেন। পরিবারের সদস্যদের নামেও শতকোটি টাকার সম্পদ করেছেন। মূলত আওয়ামী লীগের ১৬ বছরেই ভূমিহীন থেকে শিল্পপতি বনে গেছেন শহীদ। গত কয়েকদিনে ভালুকার বিভিন্ন জায়গায় সরজমিন ঘুরে শহীদের দখলবাজি ও মানুষকে জিম্মি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের নানা তথ্য মিলেছে। গণমাধ্যম অনুসন্ধানে তার বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্যও উঠে এসেছে।

বনের জমিতে রিসোর্ট:ভালুকা হবিরবাড়ী বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে দুই কিলোমিটার গেলেই গহিন বনের মাঝে দেখা মেলে গ্রীন অরণ্য পার্ক এন্ড রিসোর্ট। যেন হাজার হাজার গজারি, সেগুন, আকাশ মনি গাছের ভিড়ে সাজানো কংক্রিটের বাগান। রিসোর্টের সামনে, পেছনে, ডানে, বামে বনভূমি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। স্থানীয়রা জানান, আশাপাশের ১০ কিলোমিটার শুধু বন আর বন। ঠিক এর মাঝখানে এই রিসোর্টের অবস্থান। প্রায় ২৫০ একর জমিতে নির্মিত রিসোর্টে কি নেই! সারিবদ্ধ বিলাশবহুল ২০টি কটেজ, দেড় কিলোমিটার রিভারভিউ, খেলার মাঠ, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশুদের খেলার ৪০টি রাইড, কিডস জোন, অডিটোরিয়াম, একাধিক পার্টি স্টেজ, সুবিশাল পার্কিং, সুইমিংপুল, বাংলো, হেলিপ্যাড, স্পিডবোট, হল রুম, রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টার, ওয়াকওয়ে আরো কত কি। প্রশ্ন আসে গহিন বনের মধ্যে এত বড় জমি কার? ভালুকায় একসঙ্গে এত জমি পাওয়া সম্ভব কি? মানুষের মুখে মুখে জবাব একটাই জমি বন বিভাগের। বন বিভাগের নথিপত্রেও তাই দেখা গেছে।

বিট অফিসের কাছে দেখা হলো রিকশাচালক মোবারক হোসেনের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বনের মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০ একর জমি পাওয়া যায়? এত জমি কখনো ব্যক্তি মালিকের হয়? আমরা ১০ বছর আগেও এখানে হাজার হাজার গজারি, সেগুন গাছ দেখেছি। এখন সেখানে পার্ক হয়েছে। তবে বনের মধ্যে কিছু নিচু জমি ছিল। যেগুলো মানুষের নামে রেকর্ড হয়। সেখানে ধানচাষ হতো। তা অল্প পরিমাণ। সেখানে রিসোর্টের জন্য খাল তৈরি করা হয়েছে। মূলত ওই জমিগুলো কিনে আশপাশের বনের উঁচু সব জমি দখল করে বাউন্ডারি দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৭ বছর আগে বন বিভাগের করা একটি নথিতে শহীদুল ইসলাম শহীদকে ভূমিহীন দেখানো হয়। অথচ এক যুগের ব্যবধানে তিনি এখন ভালুকার জমিদার। একরের পর একর বনের জমি দখল করে তিনি ভূমি রাজা বনে গেছেন। সামপ্রতিক সময়ে ভালুকার হবিরবাড়ী মৌজায় ৪৭১, ৭৫৪, ৬৬৮, ৬৮৬ নং দাগে সংরক্ষিত বনভূমির ২৯.৩৫ একর ভূমি অবৈধভাবে জবরদখল করে গ্রীন অরণ্য রিসোর্টের অডিটোরিয়াম ও বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ৪১১, ৪১৩, ৬৬৯ দাগসহ আরও একাধিক সরকারি গেজেটভুক্ত বনভূমির জমি দখল করে রিসোর্ট নির্মাণ করেন বাউন্ডারি শহীদ। এই কাজে সহায়তায় অভিযোগ বন বিভাগের হবিরবাড়ী বিট অফিসার আনোয়ার হোসেন খানকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে বরখাস্ত করে বন বিভাগ। অপরদিকে ভালুকা আমতলীতে ১৫৪নং দাগে দখল হওয়া বনের ২০১ দাগের জমিতে শহীদের কয়েকটি প্লট আছে। ৪৬ শতাংশের একটি প্লটে বাউন্ডারি করা এবং ৫২ শতাংশের প্লটে  সুপ্তি ওয়েল মিল নামে একটি কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া ভালুকা বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের পূর্বপাশে ১৮৫ দাগে ৩৬ শতাংশ জমি দখল করে শহীদ একটি দোতলা বাংলো বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া বনের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে শহীদ গেড়েছেন ফার্ম ভ্যালি রিসোর্ট, গ্রীন অরণ্য টি রিসোর্ট, গ্রীন অরণ্য গলফ পার্ক নামের একাধিক প্রতিষ্ঠান।

সরজমিন দেখা গেছে, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে নিজের দখলে থাকা জমিতে তিনি গড়েছেন সুপ্তি সোয়েটার ও সুপ্তি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানা, দক্ষিণ দিকে ১০ বিঘা জমির ওপর রয়েছে সুপ্তি অয়েল মিল। ভালুকা সিডস্টোর বাজারে মদিনা কমপ্লেক্সের দক্ষিণ পাশে শহীদের রাজনৈতিক অফিস। কেউ বিরুদ্ধে গেলেই এখানে ডেকে এনে টর্চার করা হয়। লোকমুখে চাউর আছে, এই অফিসই শহীদের মিনি টর্চার সেল।

শহীদের নামে বনের যত মামলা: শহীদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ প্রথম মামলা করে ৯৪ সালে। ওই বছর আরও ৩টি মামলা হয়। এরপর ২০০৪ থেকে ৬ সাল পর্যন্ত বিট অফিসার মুস্তাফিজুল আরও ৩টি মামলা করেন। কিন্তু সবগুলো মামলায় তার বাবা মায়ের নাম ভুল দেয়া হয়। এর মধ্যে ২২হবি/৩১ ভালুকা থানার মামলায় শহীদুল ইসলামের বদলে এস. ইসলাম এবং বাবার নাম আলাউদ্দিনের বদলে আ. উদ্দিন লেখা হয়।  এসব কৌশলের কারণে শহীদকে কখনো আদালতে যেতে হয়নি।

হাবিরবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সিরাজউদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, শহীদের ক্ষমতা অসিম। কেউ তার সঙ্গে লাগতে আসে না। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরে দেখবেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই বলবে শহীদ তাদের কোনো জমি দখল করেনি। কারণ তাদের জীবনের ভয় আছে। তারা শহীদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেই চলে। এবং প্রচুর টাকার মালিক হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহীদুল ইসলাম শহীদের গ্রামের বাড়ি গফরগাঁও। নব্বইয়ের দশকে তিনি ভালুকায় আসেন। ওই সময়ে তার বাবা মো. আলাউদ্দিন ভালুকায় এসে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন হবিরবাড়ী ইউনিয়নে ৫ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেন। পরে শহীদ চাকরি নেন বন বিভাগের কর্মচারী হিসেবে। প্রথম দিকে শহীদ ঢাকা থেকে আসা বিভিন্ন শিল্প কারখানার মালিকদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরে মহাসড়কের পাশে বনের জমি ঘেঁষে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১ থেকে ২ বিঘা জমি কিনে দেন। শিল্প গ্রুপের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে একরের পর একর  জমি দখল করে গড়েন শহীদ বাহিনী। জমি দখলের পদ্ধতিও সেখানে ভিন্ন রকমের। প্রথমে ব্যক্তিমালিকানার কিছু জমি কেনা হয়। এরপর তার চারপাশে বন বিভাগের কয়েকশ’ বিঘা জমি বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে নেন। এতে নেতৃত্বে দেয়ার কারণেই শহীদুল ইসলামের নাম হয় ‘বাউন্ডারি শহীদ’। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সিডস্টোর বাজারের জায়গাটি রিজার্ভ ফরেস্টের। যেখানে বন থাকার কথা, সেই জায়গায় এখন সারি সারি অট্টালিকা।  বিশাল বিশাল শিল্পকারখানা। যার অধিকাংশই দখল ও স্থাপন হয় শহীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।

ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ: জায়না বাজার থেকে ভালুকা থানা ব্রিজ পর্যন্ত সব শিল্পকারখানার ওয়েটেজ ও ঝুট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন শহীদ। ভালুকার ৯০ শতাংশ শিল্পকারখানা মালিকদের সঙ্গে শহীদের সখ্যতা রয়েছে। কারখানার জমি ক্রয় এবং এক বিঘা কিনে বনের ১০ বিঘা দখল করে দিয়েছেন শহীদ নিজেই। এজন্য গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ভালুকার ৩৫০ অধিক কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন শহীদ। ঝুট ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে শহীদের একাধিক হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সমপ্রতি ঝুট দখলকে কেন্দ্র করে হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি মজিবুর রহমানকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে শহীদের লোকজন। এরপরে শহীদকে প্রধান আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। মামলা নং- ১৪(১৪)২৪। এ ছাড়া রাইদা গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শহীদের নামে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি মামলা হয়। ভালুকা মডেল থানা মামলা নং-১৬(১৫)২৪।

পাওয়ার প্লান্টে বনের ভূমি গায়েব: সমপ্রতি ভালুকার হবিরবাড়ি মৌজায় বারোশ্রী গ্রামে চায়নাভিত্তিক কোম্পানির সঙ্গে পার্টনারশিপে ৪৫ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করছেন শহীদ। এই প্রকল্পে জমি সরবরাহ করবেন শহীদ। বিনিময়ে তিনি প্লান্টের ৫০ শতাংশ মালিকানা পাবেন। কিছুদিন আগে উপজেলা ভূমি অফিস ও  কৃষি অফিস থেকে একটি ছাড়পত্র নেন শহীদ। ভূমি অফিসে জমা দেয়া কাগজপত্রে শহীদ  হবিরবাড়ি মৌজায় এস.এ. ২২৬, ২২৯৭, ৩৩২, ৫২৯, ৪৮৪, ১৬২, ১৫৩১, ৮৫৯, ৫১, ৮৫৮, ৮০, ৪৪১১, ৪৪১২, ৩০৭৯, ৩১১৭, ৪০, ৫৩, ৮৫, ৪৩৮৩, ৯৭১, ১১৫৭, ৪৪১০, ২৪১, ২০৮, ২৪১, ২০৮, ৩৬১, ২৯০, ২৮৯, ২৯২, ২৯৪, ২৯১, ৫৩৯ ও ২০১ নং খতিয়ানে এস.এ ৪৩১, ৪৩২, ৪৩৪, ৪৪৭১, ৪৭২, ৪৭৩, ৫৫০, ৫৬০, ৫৬১, ৫৬২, ৫৬৪, ৫৯৩, ৫৪৫, ৯০৪ ও ৪৪২ নং দাগে ১১২ একর জমি নিজের দাবি করে ওই জমিতে কোনো সরকারি স্বার্থ নেই, এই মর্মে একটি এনওসি নেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শহীদের আবেদনে উল্লেখিত ভূমির অধিকাংশ দাগই হবিরবাড়ি মৌজার অন্তর্গত নয়। মূলত অন্য মৌজার বিভিন্ন দাগের জমি হবিরবাড়ি মৌজায় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ বনের জমি দখল করে এই প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে শহীদের মালিকানাধীন গ্রিন অরণ্য রিসোর্ট, গ্রিন ভ্যালি পার্ক, গ্রিন অরণ্য টি রিসোর্টে পর্যটন করপোরেশনের ছাড়পত্র ও রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়নি। কোনো প্রকার নিয়মনীতি ও লাইসেন্স ছাড়াই শত শত একর বনের জমিতে এসব রিসোর্ট তৈরি করেছেন শহীদ। মূলত ময়মনসিংহ প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। ওই কর্মকর্তার ভাগিনা শহীদের গ্রিন রিসোর্টের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া শহীদের ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান মামুন ময়মনসিংহ বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউই শহীদের কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে পারছে না।

অর্থের জোরে রাজনীতিতে: শহীদুল ইসলাম শহীদ ভালুকা উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহ্বায়ক হলেও আলোচনা আছে গত ১৫ বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্যতম ডোনার ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকল সভা সমাবেশ হতো শহীদের টাকায়। এমনকি দলটির নেতাদের পদ পদবিও শহীদের ইশারায় হতো। এজন্য শেখ হাসিনার আমলে ভালুকা বিএনপি সর্বস্তরের নেতাদের নামে শত শত রাজনৈতিক মামলা হলেও অদৃশ্য কারনে শহীদের নামে কোনো মামলাই হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের সকল সভা সমাবেশ সরব উপস্থিতি ছিল বাউন্ডারি শহীদের। ভালুকা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তাকে আওয়ামী লীগের দুলাভাই বলেই ডাকেন। এমনকি ২০২১ সালে তার রিসোর্ট উদ্বোধন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি কাজীমউদ্দিন আহমেদ ধনুর ছোট বোন ও উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রহিমা আফরোজ সেফালি। এ ছাড়া উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সমপ্রতি আওয়ামী লীগের নেতাদের রিসোর্টে আশ্রয় দেয়া ও ঝুট ব্যবসা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর এবং দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করায় উপজেলা বিএনপি‘র পক্ষ থেকে শহীদের পদ স্থগিত চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়।

যার কারণে বিপন্ন ভালুকার বনভূমি:ময়মনসিংহ থেকে বন অধিদপ্তরে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহীদুল ইসলাম ওরফে বাউন্ডারি শহীদের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ বনবিভাগের ভালুকা রেঞ্জ। বনবিভাগের  হবিরবাড়ি বিটের প্রায় ৭ হাজার ১০ একর জমির মধ্যে ২ হাজার ১৪৪ একর জমি আছে। বাকি সব দখল হয়ে গেছে এবং কাদিগড় বিটের ৪ হাজার ৬৮৬ একর জমির মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জমি অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে।

এই বিটের বেদখল হওয়া জমির ৬০ শতাংশই হয়েছে বাউন্ডারি শহীদের মাধ্যমে।জানতে চাওয়া হলে বনবিভাগের হবিরবাড়ি বিট অফিসার মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে বনের ৮০ শতাংশ জমিই বেদখল। যে যার মতো দখল করে নিয়েছে। তবে শহীদ সাহেবের রিসোর্টে আমাদের জমি আছে কিনা জানা নাই।বনবিভাগের ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমি নতুন এসেছি। এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারিনি। তবে আমাদের প্রচুর ভূমি বেদখল আছে। গ্রিন রিসোর্টের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে আমাদের জমি থাকতে পারে, তবে আমি বিস্তারিত জেনে জানাতে পারবো।

যা বলছেন শহীদুল ইসলাম শহীদ:বনের জমি দখল করি নাই। এই অভিযোগ সত্য না। বনের জমি দখল করা যায় না। জমি দখল করলে বনবিভাগ আমার বিরুদ্ধে মামলা করে না কোনো? বনের লোকজন বলে না কেন যে আমি জমি দখল করেছি? এগুলো ভিত্তিহীন। বনের মধ্যে রিসোর্ট করতে এতো জমি কোথায় পেলেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওগুলো আমার কেনা জমি। নিজের জমিতে রিসোর্ট করেছি। তবে ২৫০ একর জমি কেনা কীভাবে সম্ভব এই প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সোলার পাওয়ার প্লান্টের বিষয়ে তিনি বলেন, এতো বড় প্রজেক্ট করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি জমি দিয়েছি। চায়নার একটা কোম্পানি এই প্রজেক্ট করছে। আপনি এতো জমি কোথায় পেলেন এই প্রশ্নের তিনি কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি। এ ছাড়া তিনি ঝুট বাণিজ্য ও মানুষকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, আমার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক আগেও ছিল না, এখনো নাই।

বাংলাদেশ সময়: ৩:৪০:৪২   ১ বার পঠিত  




অপরাধ’র আরও খবর


বনের জমিতে বাউন্ডারি, শহীদের সাম্রাজ্য
খাগড়াছড়িতে ৩ পাহাড়ি নিহত, সেনা-পুলিশসহ আহত অনেকে
কিশোরগঞ্জে ৪৫ বোতল বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার তিন
রাজবাড়ীতে ১০৪টি হারানো ফোন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করেন পুলিশ সুপার
চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে ৫৭০০ পিস ইয়াবা সহ গ্রেফতার ১
লালমোহনে বৃদ্ধা আকিমজান হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত সাতক্ষীরা থেকে আটক
সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান পরিবারের জায়গা দখলের অভিযোগ
দর্শনায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ১ জন আটক
নরসিংদীতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ফের সংঘর্ষ, নারী নিহত
র‍্যাবের অভিযানে রাজবাড়ীতে আমজাদ খান হত্যা মামলার আসামি মো: সাদ্দাম মন্ডল গ্রেফতার

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ