
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যখন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বেইজিংয়ের সহায়তা চাইছে, তখন চীনও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করছে। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বুধবার বেইজিংয়ে পা রাখেন ম্যাক্রন। সফরটি শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়, চতুর্থবারের মতো চীন সফরে যাওয়া ম্যাক্রনের সঙ্গে বড় একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল রয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি জোরদারের মাধ্যমে রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি। বিশেষত অস্থির গ্রীষ্মোত্তর সময় পার করার পর এবং ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তার এই সফর বেশ গুরুত্ব বহন করে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।বেইজিংয়ের গ্রেট হলে বৈঠকে ম্যাক্রন বলেন, চীন-ফ্রান্স সংলাপ এখন আগের চেয়ে আরও জরুরি। আমাদের সম্পর্কের জন্য আমি ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের জন্য ইতিবাচক এজেন্ডা প্রস্তাব করছি। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা অপরিহার্য। ইউক্রেন সংকটে সহযোগিতার সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।শি জিনপিং শুক্রবার ম্যাক্রনকে সঙ্গে নিয়ে সিচুয়ান প্রদেশে যাবেন। এটি ফরাসি প্রেসিডেন্টের জন্য বিরল সম্মান প্রদর্শন। তবে দুই নেতার উষ্ণতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বাস্তবতা বড় বাধা বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
চীন বহু প্রতীক্ষিত ৫০০ এয়ারবাস বিমানের অর্ডার দিতে অনাগ্রহী। কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় বেইজিংয়ের প্রভাব কমে যাবে। একইভাবে ফরাসি কনিয়াক রপ্তানিতে সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বাতিল করারও সম্ভাবনা কম। কারণ এটি ছিল ইইউ-এর চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া। ইইউ-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে ইইউ’তে শূকরের মাংস রপ্তানিতে চীনা শুল্কছাড়ও প্রত্যাশিত নয়। এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের যেকোনো উদ্যোগও রাশিয়ার প্রতি সাম্প্রতিক সমর্থনের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ইইউ বুধবার নতুন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নীতি ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ব্লকের চীনা নির্ভরতা কমানো।
শি জিনপিং বলেন, বহির্বিশ্ব যেভাবেই বদলাক, দুই দেশের উচিত বড় শক্তির স্বাধীনতা ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করা। তিনি ইউক্রেন ও গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সফর উপলক্ষে শি আরও ঘোষণা দেনÑ ফিলিস্তিন পুনর্গঠনে চীন অতিরিক্ত ১০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে। যদিও এটি ইইউ’র ঘোষিত ১.৬ বিলিয়ন ইউরো প্রতিশ্রুতির তুলনায় অনেক কম। দুই দেশের মধ্যে বয়স্ক জনগোষ্ঠী, বিনিয়োগ, পারমাণবিক জ্বালানি ও পান্ডা সংরক্ষণসহ ১২টি সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে।
ম্যাক্রনের সফরে এয়ারবাস, স্নাইডারসহ ফরাসি শিল্পখাতের শীর্ষ নির্বাহীরা অংশ নিয়েছেন। চীনের সঙ্গে ইইউ’র পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। ফ্রান্সও বছরে ৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা পণ্য আমদানি করে। এর বড় অংশই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিম্নমূল্যের পণ্য। চীন ফরাসি পণ্য প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি করে, যার ১০ শতাংশ হচ্ছে কসমেটিকস, বিমানের যন্ত্রাংশ এবং মদ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫১:২৪ ২৩ বার পঠিত