বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

তালেবান মন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে কেন এত আলোচনা

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » তালেবান মন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে কেন এত আলোচনা
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫



তালেবান মন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে কেন এত আলোচনা

ভারতে দীর্ঘ সফরে এসেছেন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। বৃহস্পতিবার আট দিনের সফরে নয়াদিল্লি পা রাখেন তিনি। তার এই সফরকে নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর এটাই তালেবান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো নেতার ভারত সফর। ভারতে আফগানিস্তানের কোনো মন্ত্রীর এত লম্বা সফরকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ অনেকেই। কূটনৈতিক মহলেও এ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কেননা কিছু দিন আগেও দিল্লিতে তালেবান সরকারের এমন সফর ছিল অকল্পনীয়। এবারের সফরে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দেবে তালেবান সরকারের এই মন্ত্রী।

এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মুত্তাকি। দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, কাবুলে পুনরায় দূতাবাস চালু করবে তারা। যা চার বছর আগে তালেবান সরকার আসার পর বন্ধ করা হয়েছিল। মুত্তাকির এই সফরের ওপর গভীর নজর রাখছে একসময়ের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র পাকিস্তান। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাময়িক অনুমোদন নিয়ে মুত্তাকি এই সফরে এসেছেন। এটি কূটনৈতিক অঙ্গনে তালেবান সরকারের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একসময় ভারত পশ্চিমা-সমর্থিত আফগান সরকারকে সমর্থন করত। কিন্তু এই সফর ভারতের ‘আফগান নীতি’তে বাস্তববাদ এবং কূটনীতির গুরুত্ব তুলে ধরেছে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী- যা দুই দেশের কৌশলগত স্বার্থ পূরণে সহায়ক হবে। কাবুলে ভারতের দূতাবাস চালু দুই দেশের মধ্যে গভীরতর কূটনৈতিক সম্পর্কের দিকে এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে তালেবান এবং ভারতের মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সফর তালেবানের জন্য পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর একটি সুযোগ এবং ভারতের জন্য আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করার একটি নতুন পথ খুলে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি পাকিস্তানের জন্য একটি ‘বিপর্যয়’ এবং আফগানিস্তানের আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে একটি সম্ভাব্য পরিবর্তন।ভারতের দিক থেকে, এই সম্পর্কের প্রধান কারণ হলো জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদা এবং ভারত-কেন্দ্রিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপ নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ রয়েছে। তালেবান ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা আফগান ভূমিকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার হতে দেবে না। এছাড়া চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবিলা করে ইরান এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ গভীর করার জন্যও তালেবানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

মোটকথা এই সফর উভয় পক্ষের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়ার জন্ম দিয়েছে যেখানে অতীত বিভেদ ভুলে গিয়ে তারা বর্তমানের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে আঞ্চলিক ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং নিজেদের আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রতিষ্ঠা করতে তালেবান এখন ভিন্ন ভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৭:২০   ৬৬ বার পঠিত