
বৃটেনে বসবাসরত ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে দেশটির সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। সংসদের মানবাধিকার বিষয়ক যৌথ কমিশনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তঃজাতীয় দমন-পীড়ন (ট্রান্সন্যাশনাল রিপ্রেশন) আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বৃটেনে থাকা মানুষদের ভয় দেখাতে অনলাইন হয়রানি, মামলা এবং শারীরিক সহিংসতার মতো উপায় ব্যবহার করছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।
এতে বলা হয়, ২০২২ সাল থেকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা হুমকির বিষয়ে গোয়েন্দা তদন্ত ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সংসদীয় ওই কমিটির চেয়ারম্যান লর্ড ডেভিড অ্যালটন সতর্ক করে বলেন দমন নীতির উল্লম্ফন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে বৃটেনের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আমরা হংকংয়ের বাসিন্দাদের পুরস্কার দেয়ার এবং ইরানে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখেছি। তবে তদন্তে উঠে আসা প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় এই পরিসংখ্যান এখন সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করেছে।
গত মাসে সংসদীয় গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা কমিটি সতর্ক করেছে, ২০২২ সাল থেকে বৃটেনের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৫ জনকে হত্যা বা অপহরণের হুমকি দিয়েছে ইরান। অন্যদিকে রাশিয়াও ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালে সের্গেই এবং ইউলিয়া স্ক্রিপালকে হত্যার চেষ্টা। যদিও মানবাধিকার কমিটি বলছে, বৃটেনে আন্তঃজাতীয় দমন নীতিতে সর্বাগ্রে রয়েছে চীন, রাশিয়া এবং ইরানের নাগরিকরা। তবে তারা এমন প্রমাণ পেয়েছে, যেখানে ভারত, রুয়ান্ডা এবং বাহরাইনসহ আরও কিছু দেশ বৃটেনের নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার চেষ্টা করেছে।
ইরিত্রিয়া সরকার কর্তৃক হুমকির প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। যার মধ্যে রয়েছে সরকার বিরোধী কর্মীদের ওপর নজরদারি। কমিটি ইন্টারপোলকে সমালোচনা করে বলেছে, এই সংস্থা আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তার অনুরোধ এর অপব্যবহার করে ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি করার বিষয়টি স্বীকার করতে অস্বীকার করেছে। তবে এ বিষয়টি মোকাবিলায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে প্রচারিত ৬ হাজার ৫৫০টি পাবলিক রেড নোটিশের প্রায় অর্ধেকই রাশিয়ার অনুরোধে জারি করা হয়েছে।লর্ড আলটন বলেন, আমরা সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত পদ্ধতি দেখতে চাই। যারা আন্তর্জাতিকভাবে দমনমূলক কার্যক্রমের ঝুঁকিতে আছে, তাদের জন্য আরও সহায়তা ও সুরক্ষা প্রয়োজন। পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্বে এ ধরনের দমন-পীড়নের অপব্যবহার এবং বিচার ব্যবস্থাকে চুপ করাতে ব্যবহারের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তোলা উচিত।
কমিটি শুধু ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশের অপব্যবহার নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেই থেমে থাকেনি, বরং বৃটেনের পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তঃজাতীয় দমন-পীড়ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং স্ল্যাপস (কৌশলগত মামলা যা জনমত প্রকাশে বাধা দেয়) থেকে আরও সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কমিটি আরও বলেছে, চীনকে বৃটেনে সদ্য কার্যকর হওয়া ফরেন ইনফ্লুয়েন্স রেজিস্ট্রেশন স্কিমের সর্বোচ্চ স্তরে রাখা উচিত। তারা বলেছে, এই তালিকা থেকে চীনের অনুপস্থিতি, চীনের আন্তর্জাতিক দমন কার্যকলাপের ব্যাপকতা বিবেচনায়, এই স্কিমের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সামঞ্জস্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ইন্টারপোলের একজন মুখপাত্র বলেন: প্রতি বছর, ইন্টারপোলের ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশুদের যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করা হয় এবং সন্ত্রাসবাদী, সাইবার অপরাধী ও মানব পাচারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ইন্টারপোল জানে রেড নোটিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য এক শক্তিশালী মাধ্যম, এজন্য আমাদের কঠোর প্রক্রিয়া আছে যাতে সব ইন্টারপোল নোটিশ ও ডিফিউশন আমাদের নিয়ম অনুযায়ী হয়। সংবিধান অনুযায়ী, ইন্টারপোল কোনো রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় বা বর্ণগত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে না, এবং আমাদের সমস্ত ডাটাবেস ও কার্যক্রমকে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৩:৫৭ ১৫ বার পঠিত