
বিশ্বের প্রায় সকল প্রেসিডেন্টই চিন্তা করেন বিশ্ব পরিবর্তনে তিনি কম যোগ্য নন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও যার ব্যতিক্রম নন। এক্ষেত্রে বরং তিনি অনেকের চেয়ে একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী। সম্প্রতি তার পদক্ষেপগুলো দেখে এমনটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে বোধহয় এমনটা হচ্ছে না। ট্রাম্প হয়ত প্রযুক্তি খাতের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভয় দেখাতে পারেন যেন তারা প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের নীতি অনুসরণ করেন। পাশাপাশি সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বিচার বিভাগের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে নত করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু কোনো কোনো বিশ্ব নেতাদের ক্ষেত্রে বোধহয় ট্রম্প এভাবে সফল হবেন না।অনলাইন সিএনএন-এর বিশ্লেষণ বলছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্যঙ্গ করা শুরু করেছেন ট্রাম্প। এর পেছনের কারণ সবারই জানা। ইউক্রেন- রাশিয়া সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রচেষ্টা পুতিনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে পুতিনকে নিয়ে উপহাস আর ব্যঙ্গ করতে ছাড় দিচ্ছে না ট্রাম্প। এমন প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পকে একজন ‘রুক্ষভাষী’ হিসেবে চিত্রিত করছে রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো।অন্যদিকে ট্রাম্প ভেবেছিলেন, বাণিজ্য যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পরাজিত করে চীনকে তার মর্জির দেশে রূপান্তরিত করবেন। কিন্তু বাস্তবতা তেমন নয়। চীনের রাজনীতি সম্পর্কে তার অংক যে ভুল তা প্রমাণিত হয়েছে। চীনের একজন কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শি কখনই মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে মাথা নোয়াবে না। এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার কিছুই মানেনি বেইজিং, যা নিয়ে ওয়াশিংটন এখন বেশ হতাশ।
চীনের মতো ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সাঙ্গেও শুল্ক যুদ্ধে পিছপা হয়েছেন ট্রাম্প। এজন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কটাক্ষ করেছিলেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বিশ্লেষক রবার্ট আর্মস্ট্রং। বলেছিলেন, ট্রাম্প সর্বদাই পিছিয়ে আসেন। যা রিপাবলিকান ওই নেতাকে বেশ ক্ষুব্ধ করেছে।সবার ধারণা ছিল ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রেও অপরিবর্তনীয় থাকবেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহুর পছন্দসই প্রায় সব কিছুই দিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে গিয়ে ট্রাম্প বুঝতে পারলেন- গাজার সংঘাত দীর্ঘায়িত করা নেতানিয়াহুর রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশল। ফলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলার ইসরাইলি উচ্চাকাঙ্ক্ষাতে সায় দেয়নি তার প্রশাসন।বিশ্বের শক্তিশালী নেতারা জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে নিজস্ব সংস্করণই অনুসরণ করছেন। যাতে সময় ও ঐতিহাসিক বাস্তবতায় মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সংক্ষিপ্ত মেয়াদকাল ও আকাঙ্ক্ষা সমান্তরাল নয়। ওদিকে ওভাল অফিসে ট্রাম্প কর্তৃক ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে অপমান করার প্রচেষ্টায় বিশ্ব নেতাদের কাছে ক্রমশ আকর্ষণ হারাচ্ছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ কয়েক মাস পুতিন ও শির সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে কাটিয়েছেন। তিনি এটা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তিনি ক্ষমতায় এসেই বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বগুলো সমাধান করে ফেলবেন। তবে বাস্তবতায় তার পররাষ্ট্র নীতি ক্রমাগত ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৯:০৪ ১৩ বার পঠিত