গাজায় আবর্জনার স্তূপে খাবার খোঁজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী মা

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » গাজায় আবর্জনার স্তূপে খাবার খোঁজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী মা
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫



গাজায় আবর্জনার স্তূপে খাবার খোঁজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী মা

এখানে-ওখানে ধ্বংস্তূপ। কোথাও ছড়ানো আবর্জনার স্তূপ। তা ঘিরে ভনভন করে উড়ছে মাছি। সেই গন্ধময় স্তূপেই নুয়ে পড়েছেন এক মা ও তার নয় বছরের মেয়ে। হাতে একটি পুরনো পলিথিন। পরিত্যক্ত ছেড়া পলিথিনের ফাঁকে তারা খুঁজে চলেছেন খাদ্য। কেউ যদি ফেলে রাখে অবশিষ্ট ভাত, পচা পাউরুটির একটি টুকরো, কিংবা পুরোনো কোনও খাবারের পাত্রে লেগে থাকা সামান্য চিজ। এই দৃশ্যই এখন গাজা শহরের নিত্যদিনের বাস্তবতা।

ইসলাম আবু তাইমা এক সময়ের শিক্ষিত নারী। এখন গাজার এক স্কুলে শরণার্থী হিসেবে বসবাসরত শত শত পরিবারের একজন। সেই স্কুল থেকে সকালে বেরিয়েছেন খাবারের সন্ধানে, সন্ধ্যায় ফিরে যাবেন সংগৃহীত উচ্ছিষ্ট নিয়ে। যেটুকু মেলে, ফুটিয়ে নরম করবেন, তারপর নিজের পাঁচ সন্তানের মুখে তুলে দেবেন। তিনি বলেন, আমরা না খেয়ে মরছি। খেতে না পারলে বাঁচব কী করে?

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। যুদ্ধের আগে দারিদ্র্য থাকলেও কেউ ময়লা খুঁড়ে খাবার খুঁজতেন না। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইলের নজিরবিহীন সামরিক অভিযানে গাজা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। সর্বশেষ তিন মাসেরও বেশি সময় সম্পূর্ণ অবরোধে আটকে থাকা ২৩ লাখ মানুষের জন্য এখন খাবার খোঁজার শেষ ঠিকানাও হয়ে উঠছে আবর্জনার স্তূপ। শিশুরা আগেও ময়লা খুঁজত, কিন্তু তখন পলিথিন, কাঠ কিংবা জ্বালানি হিসেবে পোড়ানোর উপাদান খুঁজে বেড়াতো। আর এখন তারা খোঁজে খাবার।

আবু তাইমা ও তার মেয়ে ওয়াআদ শহরে ঘুরে বেড়ায় সারাদিন। খুঁজে খুঁজে খাবার জোগাড় করেন। আবু তাইমা বলেন, এটাই আমাদের প্রতিদিনের জীবন। কিছু না পেলে না খেয়ে থাকি। এক সময়ের স্নাতক, আল কুদস ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ডিগ্রি নেওয়া আবু তাইমা ইসলাম বলেন, নিজেকে করুণা হয়- এত শিক্ষিত হয়েও ময়লা থেকে খাবার খুঁজে খেতে হয়। তার স্বামীরও কাজ ছিল ইউএনআরডব্লিউ-এর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। ২০২১ সালের যুদ্ধের সময় আহত হন, এরপর আর কাজ করতে পারেননি। ইসরাইল ২রা মার্চ থেকে সব ধরনের খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন আগে কয়েকশ ট্রাক প্রবেশ করতে পারলেও তা যথেষ্ট নয়।

বেশিরভাগই লুটপাট, অথবা ইসরাইলি সামরিক বিধিনিষেধের কারণে উত্তর গাজার মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। জাতিসংঘ বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় এ ত্রাণ অতি সামান্য। অন্যদিকে, বাজারে যেটুকু খাবার পাওয়া যায়, তার দাম আকাশছোঁয়া। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা সব হারিয়ে উদ্বাস্তু তাদের কোন সুযোগই নেই। গাজায় এখন একমাত্র ভরসা চ্যারিটি কিচেন। যেখানে দৈনিক একবেলা বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু এত মানুষের ভিড়, ঠেলাঠেলিতে প্রতিদিনই অনেকেই খালি হাতে ফেরেন। তাইমা ইসলাম বলেন, মানুষ নিজেরাই কষ্টে আছে। কেউ কিছু দেবে না। তাই ময়লা খোঁজা ভালো।

আবু তাইমার পরিবার ২০২৩ সালের নভেম্বরে শাতি শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে তারা গোলার আঘাতে আহত হন। এরপর রাফাহর একটি তাঁবুতে পাঁচ মাস, তারপর দেইর আল-বালাহতে যান। এক পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক স্কুল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও তাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ তারা গাজার উত্তরের নয়। তাইমা ইসলাম বলেন, তখন আমি হুমকি দিই নিজেকে ও সন্তানদের আগুনে পুড়িয়ে দেব। তারপরেই একটা স্কুলে জায়গা দেয়। গাজার মতো এলাকায় শিক্ষা, স্বপ্ন, পেশাগত জীবন সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে ক্ষুধার কাছে। একজন শিক্ষিত মায়ের কণ্ঠে যে আর্তি শোনা যায়, তা শুধু তার একার নয়, এটা গোটা গাজার বিলুপ্তির পথে যাওয়া জীবনের প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪১:৫০   ৩৯ বার পঠিত  




আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


ভারতীয় বাহিনীর হাতে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের মৃত্যুর পর সীমান্তে আতঙ্ক
রাফাল ভূপাতিতের ঘটনায় ভারত ও ফ্রান্সের দ্বন্দ্ব
হাসিনার বিচার নিয়ে বিদেশি মিডিয়া যা লিখেছে
গাজায় ত্রাণ বিতরণকালে ইসরাইলের হামলা, নিহত ৩১
ভুল পররাষ্ট্র নীতি, ক্রমাগত হতাশ হচ্ছেন ট্রাম্প?
অতি গরমে হজযাত্রীদের প্রতি সৌদি আরবের নির্দেশনা
ফিলিস্তিনপন্থী বক্তৃতার জন্য এমআইটি ইভেন্টে নিষিদ্ধ ভারতীয়-আমেরিকান ছাত্রী মেঘা ভেমুরি
বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চায় ভারত
দখল করে নেয়া পশ্চিম তীরে আরও ইহুদি বসতির অনুমোদন
ইসরাইলি হামলার মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় উড়ল ফিলিস্তিনের পতাকা

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ