
জরুরি ভিত্তিতে ও অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ, মুনসুন রেভ্যুলুশনের ভিকটিমদের ন্যায়বিচার এবং র্যাব বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন অষ্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের ৪১ জন সিনেটর ও সদস্য। ২১শে মে এই তিনটি দাবি জানিয়ে তারা অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের প্যাডে চিঠি লিখেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। এতে তারা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ মুনসুন রেভ্যুলুশনে যে সাহসিকতা ও সাহস প্রদর্শন করেছেন তাকে আমরা স্বীকৃতি দিই। এটা আপনার প্রশাসনকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং সুশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জরুরি ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে তারা লিখেছেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক বৈধতার পথ একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে এর আগে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তা স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় যে বৈধতা, তাতে তা ছিল না। নির্বাচনী ব্যবস্থার সততা পুনঃস্থাপনে এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক হস্তান্তর নিশ্চিত করতে আমরা আপনার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি সম্প্রদায় আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, এই নির্বাচন এই বছরে হবে বলে তারা আশা করেন। অযাচিতভাবে প্রভাব বা দমনকে প্রতিরোধ করে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান ফিল্ড প্রস্তুতে সব লেজিসলেটিভ ও নির্বাহী বিভাগকে ব্যবহার করুন। আমরা আশা করি বাংলাদেশে এই পরিবর্তনগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে। আপনার সম্প্রদায় ক্ষমতায়িত হবে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে সঠিক স্থান পাবে।
চিঠিতে মুনসুন রেভ্যুলুশন অংশে বলা হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মুনসুন রেভ্যুলুশন ঘটিয়েছেন, তাদের সাহস দ্বারা বিশ্বের বহু মানুষের মতো আমরাও উৎসাহিত। তবে এই বিজয় এসেছে মানুষের জীবনের বড় মূল্যের বিনিময়ে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রয়টার্স এবং জাতিসংঘের রিপোর্ট এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ওই আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন। সাবেক সরকারের বছরের পর বছর ধরে নৃশংস নিষ্পেষণের পর এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বহু আবেদন পেয়েছি। তাতে অনুরোধ করা হয়েছে- আমরা যেন আপনার সরকারকে অনুরোধ করি অতীতে সহিংস রাজনৈতিক অপরাধের জন্য যারা দায়ী, তাদের যেন জবাবদিহি করা হয়। তবে তা হতে হবে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায়। নিহত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের প্রতি সত্য ও ন্যায়বিচারের অনুরোধ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ যেন দেয়া হয়। এই আহ্বানের শক্তি ও মানবিক দিক আমরা অনুধাবন করতে পারি।
চিঠিতে র্যাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বলা হয়, বার বার মানবাধিকার বিষয়ক রিভিউয়ে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, র্যাব ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে আছে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ২৬৯৯ জনকে বেআইনিভাবে হত্যা করেছে র্যাব। এর জন্য এই বাহিনীকে দেয়া হয়েছে পুরো দায়মুক্তি। ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে নীরব করে দিতে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেট করতে দেয়া হয়েছে। র্যাবের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমরা তাতে সমর্থন করি। একই সঙ্গে আমরা অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই একই পদক্ষেপ নিতে। আবারও আমরা অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের অনুরোধ আপনার প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি- র্যাবকে বাতিল করুন এবং ভিকটিমদের ন্যায়বিচার দিন।
চিঠির শেষাংশে উপসংহার দেয়া হয়েছে। তাতে আবারও অবিলম্বে এবং প্রকাশ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমুলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি একটি জরুরি এবং আলোচনার অযোগ্য পদক্ষেপ। এতে বিলম্ব বা অস্পষ্টতা কেবল জনসাধারণের অবিশ্বাসকে আরও গভীর করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করবে। বাংলাদেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আমরা আপনার নেতৃত্বকে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনরুদ্ধারে এই অপরিহার্য পদক্ষেপকে সমর্থন করতে আমরা গঠনমুলকভাবে জড়িত হতে প্রস্তুত।
শেষে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ৪১ জন সিনেটর ও এমপির নাম আছে। তারা হলেন সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, সিনেটর ডেভিড শোয়েব্রিজ, সিনেটর জর্ডন স্ট্রিল-জন, সিনেটর ফাতিমা পেম্যান, সিনেটর লিদিয়া থর্প, সিনেটর পেনি অ্যালম্যান-পেনি, সিনেটর মেহরিন ফারুকি, সিনেটর স্টিফ গগিনস-মে, সিনেটর বারবারা পোকক, সিনেটর পিটার উইশ-উইলমসন, সিনেটর ডোরিনদা কক্স, সিনেটর নিক ম্যাককিম, সিনেটর সারা হ্যানসন-ইয়াং, এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন এমপি, আবিগেইল বোয়েড এমএলসি, আমান্ডা কোহন এমএলসি, ক্যাথেরিন কোপসে এমএলসি, সু হিগিনসন এমএলসি, কেট ফায়েম্যান এমএলসি, আনাসিনা গ্রে-বারবেরিও এমএলসি, আইভ পুগলিয়েলি এমএলসি, ড. সারা ম্যান্সফিল্ড এমএলসি, ব্রাড পেটিট এমএলসি, জেনি লিওং এমপি, তামারা স্মিথ এমপি, কোবি শেঠি এমপি, টিম রিড এমপি, ইলেন স্যানডেল এমপি, মাইকেল বার্কম্যান এমপি, গাব্রিয়েলে ডি ভিয়েত্রি এমপি, ড. রোজালি উডরুফ এমপি, তাবাথা ব্যাজার এমপি, সিসিলি রসোল এমপি, ক্যাসি ও’কনর এমএলসি, ভিকা বেলে এমপি, হেলেন বুমেট এমপি, শ্যান র্যাটেনবারি এমএলএ, অ্যানড্রিউ ব্রাডক এমএলএ, জো ক্লে এমএলএ, লরা নাটাল এমএলএ এবং রবার্ট সিমস এমএলসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০১:২৮ ২০ বার পঠিত