![]()
ইরাকিরা আরেকটি নির্বাচনের মুখোমুখি। কিন্তু অনেকেরই আশঙ্কা এবারও কিছুই বদলাবে না। ১১ই নভেম্বরের ভোটের জন্য রাস্তাজুড়ে সংস্কারপন্থী প্রচার ব্যানার ঝুললেও, সাধারণ মানুষ এগুলোকে দেখছে একপ্রকার অর্থহীন প্রতীক হিসেবে। এরা সেই অভিজাত শ্রেণির মানুষ যারা ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর থেকে এ পর্যন্ত বাস্তবে খুব কমই দিয়েছে জনগণকে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
২০০৩ সালের পর থেকে দুর্নীতি, উচ্চ বেকারত্ব ও নিম্নমানের জনসেবার কারণে সাধারণ জীবনে নেমে এসেছে অস্থিরতা, যদিও সাবেক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের দমনমূলক একনায়কতন্ত্রের অবসানের পর গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়মিতই হচ্ছে। ইরাকিরা অভিযোগ করছে, দেশের শিয়া ও সুন্নি নেতাদের অনেকেই ক্ষমতার গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে এতটাই নিমগ্ন যে তারা দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারছেন না, যদিও দেশটির বিশাল তেলের সম্পদ রয়েছে।
পরিবর্তনের আশায় প্রচার বিলবোর্ড আর স্লোগান ছড়ালেও সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচনের ফলাফল আগেভাগেই নির্ধারিত মনে হয়। বাগদাদের বাসিন্দা সাঈদ হাতেম সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, তুমি রাস্তায় বিজ্ঞাপন দেখছো। কিন্তু তারা তো ২০-২৫ বছর ধরে শাসন করছে। আমি কিভাবে তাদের বিশ্বাস করব?
ইরাকের স্বাধীন উচ্চ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সংসদীয় নির্বাচনে মোট ৭,৭৬৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে ২,২৪৮ জন নারী ও ৫,৫২০ জন পুরুষ। ৩ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রচারণার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই ভোটের মাধ্যমে পরীক্ষা হবে ইরাকের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা, যে ব্যবস্থা জনসেবা উন্নয়ন ও দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাস্তবে খুব কমই করেছে। বেশির ভাগ ইরাকির মতে, দেশে তেল থেকে বিপুল আয় কেবল রাজনৈতিক অভিজাতদের উপকারে আসে। বর্তমান শিয়া প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি ও তার দল মূলত অন্যান্য প্রভাবশালী ইরানসমর্থিত শিয়া গোষ্ঠীগুলোর বিপক্ষে লড়বে।
হতাশা আরও বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরুত্থানে। সম্প্রতি সংসদীয় প্রার্থী সাফা আল-মাশহাদানি নিহত হয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি থেকে শুরু করে স্থানীয় শিয়া মিলিশিয়াদের সমালোচনা করেছিলেন, যাদের তিনি তার নিজ শহর দখল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন। অন্য এক প্রার্থী, তাবারক তারিক আল-আজ্জাওয়ি জানান যে তিনি হুমকি পেয়েছেন এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমি আশা করি এই পর্বটি কোনো অতিরিক্ত ক্ষতি বা হত্যাকাণ্ড ছাড়াই শেষ হবে, হোক তা প্রার্থী বা সাধারণ নাগরিকদের। আমি চাই নিরাপত্তা ও স্থিতি বজায় থাকুক। ইরাকের প্রধান নিরাপত্তা মুখপাত্র জেনারেল সাদ মান বলেন, প্রার্থীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং কয়েকটি গ্রেফতার ও তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
তবে অনেক ইরাকির বিশ্বাস, নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব। কারণ একই ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো এখনো রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিশাল জ্বালানি সম্পদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই ইরানঘনিষ্ঠ সশস্ত্র মিলিশিয়াদের দ্বারা সমর্থিত, যারা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, সরকারি চুক্তি ও তহবিলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। ভোটারদের মতে, এর মাধ্যমে শাসক জোটগুলো নিজেদের পক্ষে নির্বাচনের ফল সাজিয়ে নিতে পারে এবং তাদের অনুগামীরাই সুবিধা পায়, একটি পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
একজন গোত্রনেতা শেখ আব্দুল জাবের হামৌদ বলেন, সরকারি তৎপরতা ও সেবার উন্নতি কেবল নির্বাচনের সময়েই দেখা যায়, বছরের বাকি সময় জনগণ অবহেলিত থাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাইস আল-জুবাইদি মন্তব্য করেন, আমি মনে করি ইরাকের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আর গণতান্ত্রিক নয়; বরং এটি কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত একটি প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে ২০০৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন, নাগরিকরা পরিবর্তন চায়, কিন্তু এই পরিবর্তন অসম্ভব প্রায়- যখন দেশে অনিয়ন্ত্রিত অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলো সক্রিয়।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৩৭:৫৪ ৫১ বার পঠিত