বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনি মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন, পরিচয় শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ফিলিস্তিনি মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন, পরিচয় শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫



ফিলিস্তিনি মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন, পরিচয় শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা

গাজায় যেসব ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরাইল তাদের বেশির ভাগের শরীরেই অমানবিক নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এতে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে উপত্যকার চিকিৎসকরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, গাজার নাসের হাসপাতালে একটি কক্ষের সীমিত সুযোগ-সুবিধায় কাজ করছে ফরেনসিক টিম। তাদের কাছে নেই ডিএনএ পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা বা মৃতদেহ সংরক্ষণের ঠান্ডা কক্ষ। গত ১১ দিনে ইসরাইল ১৯৫টি মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে। যাদের বেশির ভাগের শরীরেই রয়েছে অমানবিক নির্যাতনের চিহ্ন। ফলে ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়া মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, অনেক মৃতদেহ ছিল অর্ধনগ্ন বা কেবল অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায়। অনেকের হাত-পা পিছনে বাঁধা, চোখ বাঁধা এবং ঘাড়ে কাপড়ের ফাঁসের চিহ্নও দেখা গেছে। নাসের হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ ধেইর বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ঠান্ডা সংরক্ষণাগারের অভাব। মৃতদেহগুলো বরফে জমাট অবস্থায় আসে, গলতে কয়েক দিন সময় লাগে। ফলে শনাক্তকরণ বা ময়নাতদন্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তার সহকর্মী ডা. আলা আল-আস্তাল জানান, অনেক মৃতদেহে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাত-পায়ের রগ কাটা, রক্ত জমাট বাঁধা, এমনকি চোখের চারপাশে গভীর দাগওয়ালা অনেক মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কিছু মৃতদেহের ঘাড়ে দড়ির দাগ ছিল। ময়নাতদন্ত না করতে পারায় বোঝা যাচ্ছে না, এটা ফাঁসি না শ্বাসরোধজনিত মৃত্যু। হামাস প্রশাসনের ফরেনসিক কমিটির সদস্য সামেহ ইয়াসিন হামাদ বলেন, কিছু মৃতদেহে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ও মারধরের দাগ পাওয়া গেছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং ফেরত দেওয়া সব মৃতদেহই যোদ্ধা শ্রেণির। তবে গাজার চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশ মৃতদেহে বেসামরিক পোশাক পাওয়া গেছে। কানাডার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাইকেল পোলানেন বলেন, এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফরেনসিক জরুরি অবস্থা। প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জানতে পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত অপরিহার্য।

গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, এখন পর্যন্ত ৫০টি মৃতদেহ শনাক্ত করা গেছে, কিন্তু অর্ধশতাধিক দেহ অজ্ঞাত অবস্থায় দাফন করতে হয়েছে জায়গার অভাবে। নিজের হারানো স্বজনের দেহ খুঁজে পাওয়ার আশায় পরিজনরা হাসপাতালের বাইরে ভিড় জমাচ্ছেন। রামি আল-ফারাআ বলেন, আমরা জানি না কাকে কবর দেয়া হচ্ছে। আরেকজন বলেন, যদি ডিএনএ পরীক্ষা হতো, তাহলে অন্তত নিশ্চিত হতে পারতাম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও গাজার মানুষের সামনে এখনো রয়ে গেছে অজানা মৃতদেহের করুণ বাস্তবতা। উপত্যকায় শান্তির খবর দেয়া হলেও কেউই নিশ্চয়তা বা সমাধান দিতে পারছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৯:০২   ৫৪ বার পঠিত