তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেভাবে বাতিল হয়

প্রথম পাতা » জাতীয় » তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেভাবে বাতিল হয়
বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫



তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেভাবে বাতিল হয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।

এটি কেবল একটি প্রশাসনিক কাঠামোর প্রশ্ন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসেরও একটি প্রতিফলন।

মূলত ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা কেয়ারটেকার সরকার ধারণার জন্ম।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি অনানুষ্ঠানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হলেও, ১৯৯৪ সালের মাগুরা উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ পরিস্থিতি পাল্টে দেয়।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে কোনোভাবেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এই অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো তীব্র আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক রূপ দেওয়া হয়।

যেখানে বলা হয়েছিল, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে, যার প্রধান কাজ হবে পরবর্তী তিন মাস বা ৯০ দিনের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা।

এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এবং এর ফলে উভয় নির্বাচনেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হয়েছিল।

বাংলাদেশে ২০০৬ সালের পর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়।

২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং একটি সেনা-সমর্থিত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়, যা পরবর্তীতে ১/১১ সরকার নামে পরিচিত হয়। এই সরকার দীর্ঘ দুই বছর ক্ষমতায় থেকে নিজেদের সাংবিধানিক এখতিয়ারের বাইরেও কাজ করে।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালের ১০ই মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

ওই রায়ে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অর্থাৎ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন অগণতান্ত্রিক এবং তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এরপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পর, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।

প্রধান বিরোধী দলগুলো সবসময়ই অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৫:৫০   ৩৬ বার পঠিত  




জাতীয়’র আরও খবর


এই হামলা বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত: প্রধান উপদেষ্টা
আইনি লড়াইয়ে বিদেশি আইনজীবী চাইলেন সালমান-আনিসুল
‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে আন্দোলন সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সচিবালয়ের ১৪ কর্মকর্তা–কর্মচারীর পাঁচ দিনের রিমান্ড
কারাবন্দী ৪ সাংবাদিকের মুক্তি চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সিপিজের চিঠি
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকের পর যা বললেন সিইসি
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি
ট্রাইব্যুনালকে চিফ প্রসিকিউটর গুমের নির্দেশ দিতেন হাসিনা, বাস্তবায়ন করতেন মেজর তারিক
সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ
খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ