দাপুটে জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

প্রথম পাতা » খেলা » দাপুটে জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫



দাপুটে জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

টানা চার সিরিজ হারের পর ঘরের মাঠে মান বাঁচানোর চাপ নিয়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে নেমেছিল মেহেদী হাসান মিরাজের দল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সুপার ওভারের নাটকীয় হারের স্মৃতি তখনো টাটকা। টসে জিতে  আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। তারা স্কোরবোর্ডে তোলে ২৯৬ রান, যেখানে ওপেনিং জুটিতে সাইফ হাসান ৮০ ও সৌম্য সরকার ৯১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন। পরে বোলারদের সম্মিলিত দাপটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শুধু সিরিজই জেতেনি, নিশ্চিত করেছে এক দাপুটে প্রত্যাবর্তন। রানের ব্যবধানে এটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়, যা কেবল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া ১৮৩ রানের জয়ের পরেই স্থান করে নিয়েছে। এই জয়ে স্বস্তি ফিরলেও, র‌্যাঙ্কিংয়ে সেই ১০ নম্বরেই পড়ে থাকতে হচ্ছে টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের এই সিরিজ জয় নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক বড় স্বস্তি, সেইসঙ্গে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের আধিপত্যের ধারা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হলো।

২৯৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু থেকেই টাইগার স্পিনারদের স্পিন-জালে দিশাহারা হয়ে পড়ে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে তারা মাত্র ৩০.১ ওভারেই ১১৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। পাওয়ারপ্লেতেই তিনি অ্যালিক আথানেজ, ব্র্যান্ডন কিং এবং আকেম অগুস্তোকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। নিজের স্পেলে তিনি যেন ত্রাস সৃষ্টি করলেন; ৬ ওভার বল করে ১টি মেডেনসহ মাত্র ১১ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। তার সঙ্গী তানভীর ইসলামও একই ধারায় বোলিং করে শেই হোপ এবং কেসি কার্টিকে আউট করে ক্যারিবীয়দের কোমর ভেঙে দেন। এরপর লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন নিজের স্পিনে শেরফেন রাদারফোর্ড, রোস্টন চেজ ও গুডাকেশ মোতিকে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের পরাজয়ের আনুষ্ঠানিকতা নিশ্চিত করেন, যিনি ৯-০-৫৪-৩ দিয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেন। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২ উইকেট নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আকিল হোসেন সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে নেয়। এই ঐতিহাসিক জয়ের মধ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ধারাবাহিকতা কেবল বজায় থাকলো না, বরং আগামী দিনের আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এক নতুন আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করলো মিরাজের দল।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের অপেক্ষাকৃত মন্থর ও স্পিন-সহায়ক পিচে উইকেটের ভয় বা পিচের মন্থরতা- কোনো কিছুই পাত্তা পেল না দুই ওপেনারের সামনে। সাইফ হাসান ৮০ ও সৌম্য সরকার ৯১-এর ব্যাটে সূচনা হলো এক ঐতিহাসিক ম্যাচের। এই জুটি ১৫১ বলে ১৭৬ রানের এক স্বপ্নের ওপেনিং স্ট্যান্ড গড়ে তোলে, যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রায় এক দশক পর প্রথম কোনো সেঞ্চুরি ওপেনিং জুটি। শুরু থেকেই তাদের আগ্রাসী মনোভাবে স্পষ্ট ছিল দলের জয় ছিনিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাইফ হাসান আকিল হোসেনকে মাঠের নিচে দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান। সৌম্য সরকার তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে রোস্টন চেজকে জোড়া ‘রিভার্স-হিট’ ছক্কা মেরে বুঝিয়ে দেন, আক্রমণই হবে প্রধান কৌশল।সাইফ তার ইনিংসটি সাজান ৬টি চার ও ৬টি ছক্কায়, মাত্র ৭২ বলে তিনি পূর্ণ করেন তার প্রথম ওয়ানডে ফিফটি। বিশেষ করে মিডিয়াম পেসার জাস্টিন গ্রিভসের বলে উইকেটের ভেতরের দিকে সরে এসে যে ‘হাই-এলবো’ শটে তিনি বলকে লং-অফের উপর দিয়ে সীমানা পার করালেন, ক্রিকেটপ্রেমীরা এটিকে নিঃসন্দেহে ম্যাচের সেরা শট হিসেবে গণ্য করছেন। গুডাকেশ মোতিকে লং-অফের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ পূর্ণ করেন সাইফ। এই সময়ে বাংলাদেশ দল মোট ১৪টি ছক্কা হাঁকিয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডেও সমতা আনে। সৌম্য সরকার চারটি ছক্কা ও সাতটি চারের সাহায্যে ৮৬ বলে ৯১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে শতক মিস করার হতাশায় ব্যাট আছড়ে ফেললেও, তার এবং সাইফের ভিতের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ সিরিজে সর্বোচ্চ ২৯৬ রান স্কোরবোর্ডে তুলতে সক্ষম হয়।

১৭৬ রানের স্বপ্নের শুরুটার পর মিডল-অর্ডারে যেন আচমকা এক দুর্যোগ নেমে আসে। ২৫.২ ওভারে সাইফ আউট হওয়ার পর ২৮.১ ওভারে সৌম্যও প্যাভিলিয়নে ফেরেন। এরপরই ইনিংসের নিয়ন্ত্রণ হারায় বাংলাদেশ। পরবর্তী ১২০ রান যোগ করতে গিয়েই শেষ ৮টি উইকেট হারায় টাইগাররা। মূলত শেষ ১৪৯টি বলে রানের গতি কমে যাওয়ায় ২৯৬ রানেই থামতে হয় দলকে, যার ফলে ৩০০ রানের মাইলফলক অধরা থেকে যায়। বিশেষ করে আকিল হোসেন ৪৬তম ওভারে তানভীর ইসলাম, রিশাদ হোসেন, ও নাসুম আহমেদকে ফিরিয়ে দিয়ে লোয়ার-অর্ডারকে গুঁড়িয়ে দেন। এই ধসের মধ্যেও নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৪ এবং তৌহিদ হৃদয় ২৮ তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে তোলেন। শান্ত যদিও দু’বার জীবন পেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৪ রানের মাথায় বোলার অ্যালিক আথানেজের নিজের বলে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে তার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আকিল হোসেন ৪টি উইকেট এবং অ্যালিক আথানেজ ২টি উইকেট নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২:২৬:০৭   ৩৮ বার পঠিত  




খেলা’র আরও খবর


দাপুটে জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
সুপার ওভারে ১ রানে হার বাংলাদেশের
৬ অক্টোবর বিসিবির নির্বাচন হতে বাধা নেই
‘তামিমকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে’, দাবি ক্রীড়া উপদেষ্টার
বিসিবি নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত, চিঠি বৈধ
ফ্লিকের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল উয়েফা
আবারও ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে দশে নামলো বাংলাদেশ
ক্রিকেটার নাসির-তামিমার আত্মপক্ষ শুনানি পিছিয়েছে
সাকিবসহ ১৫ জনের নামে দুদকের মামলা
আরসিবি’র প্রথম আইপিএল ট্রফি জয় উপলক্ষে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ