![]()
হোয়াইট হাউসে মিটিং চলছিল। সেই মিটিং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। এর মাঝে বিঘ্ন ঘটালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি উঠে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতে একটি ‘নোট’ দিলেন। কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, গাজা চুক্তি অত্যাসন্ন। এর কিছুক্ষণ পরেই নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দিলেন- ‘ব্লেসড আর দ্য পিসমেকারস!’ অর্থাৎ শান্তির প্রতিষ্ঠাকারীদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। এই নাটকীয়তা যখন সাংবাদিকদের সামনে ঘটে তখন ওই কক্ষে বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিক সহ অন্য সাংবাদিকরা ছিলেন। সেখানে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা তাদের চোখের আড়ালেই ঘটে যায়। এ সময়েই শান্তিচুক্তি করতে অনীহা জানানো বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর তিনি চাপ বাড়ান। তার সঙ্গে আরবদের সমর্থন পেয়ে যান। এমনি করেই হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তিচুক্তি করতে ভূমিকা রাখেন ট্রাম্প। তিনি এবার শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার আশা করছেন। আগামীকাল শুক্রবার এই পুরষ্কার ঘোষণা করা হবে। তিনি পুরষ্কার পাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে পেলে তার লিগ্যাসি আরও শক্তিশালী হবে, সমৃদ্ধ হবে।
এর আগে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলকে যেভাবে তিনি ব্লাঙ্কচেক দিয়েছেন, এবার তার থেকে ভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে এটাকে বলা হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তির জন্য নাটকীয় মুহূর্ত, যিনি প্রকাশ্যে ‘পিসমেকার ইন চিফ’ হতে পছন্দ করছেন। এর আগে ২৯শে সেপ্টেম্বর নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে তিনি গাজার শান্তি প্রতিষ্ঠার ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি নেতানিয়াহুকে সাহস দেন। তিনি বলেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনা গ্রহণ না করে তাহলে গাজায় ‘কাজ শেষ করায় পূর্ণ সমর্থন থাকবে’ ইসরাইলের প্রতি এবং ফিলিস্তিনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করে দিতে। প্রথমত নেতানিয়াহু এবং ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সামনে তিনি যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তার ওপর গত সপ্তাহে আরব ও মুসলিম নেতাদের মধ্যে জাতিসংঘে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে তা নিয়ে খসড়া করা হয়। অন্যদিকে নেতানিয়াহু দেখতে পান এতে এমন কিছু গুরুত্বপূণৃ বিষয় আছে, যা তিনি মেনে নেবেন না বলে শপথ নিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলা ট্রাম্পের জন্য কাজে দিয়েছে। তারা কাতারের পর হামাস সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে সমঝোতা প্রক্রিয়া একটি স্পর্শকাতর অবস্থায় পৌঁছে। এই হামলার বিরুদ্ধে আরব ঐক্যকে ব্যবহার করেন ট্রাম্প। তারা হামাসকে চুক্তি মেনে নিতে আহ্বান জানায়। এরপর নেতানিয়াহুকে ধরেন ট্রাম্প।
কাতারে হামলার জন্য ওভাল অফিস থেকে তাকে কাতারি নেতাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। এমনকি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী যখন একটি কাগজে এই ক্ষমা চাওয়ার বিবৃতি পড়ে শোনান তখন নেতানিয়াহুর কানে ফোন ধরে রাখেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত ছবিতে এমনটা ধরা পড়েছে। ওদিকে পলিটিকো রিপোর্টে লিখেছে, নেতানিয়াহু ঠিকঠাক পড়ছেন কিনাা তা পরখ করতে ওই কক্ষে তখন কাতারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এরপর কাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়ক একটি অসাধারণ নির্দেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। তিনি আরবদের সঙ্গে সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ করছেন। আগামী রোববার মধ্যপ্রাচ্য সফর করার কথা তার। তবে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে তিনি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে স্বাক্ষর করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো। আর দ্বিতীয় মেয়াদে তার প্রথম বিদেশ সফরের মধ্যে ছিল উপসাগরীয় দেশ কাতার, মিশর ও আবু ধাবি। তবে এ সময় তিনি ইসরাইলে যাননি।
যুদ্ধ যখন ভয়াবহ রূপ নিযেছে, তখন হামাসের ওপর কড়া চাপ সৃষ্টি করেন তিনি। তাদেরকে ৫ই অক্টোবর সময়সীমা বেঁধে দেন। বলেন, এর মধ্যে চুক্তি মানতে হবে নাহলে ‘নরকে যেতে হবে’। হামাসও ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে লুফে নেয়। তারা গাজায় আটকে থাকা সব জিম্মি মুক্তি দেয়ায় সম্মত হয়। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসে জিম্মিদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে বার বার সাক্ষাৎ দিতে থাকেন ট্রাম্প। দ্রুততার সঙ্গে তিনি এর ভিতর থেকে জয় খুঁজে নেন। তিনি এক ভিডিওবার্তায় হামাসের বিবৃতি পোস্ট করেন। তবে হামাস তার পরিকল্পনার সব শর্ত মেনে নেয়নি। এ বিষয়টি উল্লেখ করেননি। এ নিয়ে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ান। হামাস ও মধ্যস্থতাকারীরা দ্রুততার সঙ্গে একটি চুক্তি দাঁড় করান। এ সময় নেতানিয়াহুকে ট্রাম্প বলেন- বিবি, এটাই তোমার জয়ের সুযোগ। ট্রাম্পের এই বার্তায় সায় দেন নেতানিয়াহু। কারণ তার সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:১৫ ৬৮ বার পঠিত