বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মাধ্যমে নতুন করে দমন-পীড়ন

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মাধ্যমে নতুন করে দমন-পীড়ন
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫



বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মাধ্যমে নতুন করে দমন-পীড়ন

সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন করে দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সমালোচনা করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচডব্লিউআর)। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থকদের গ্রেপ্তারে সম্প্রতি সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশে কর্তব্যরত জাতিসংঘের মানবাধিকার দলের উচিত নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানানো এবং মানবাধিকার সমুন্নত করতে ও বেআইনিভাবে রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে উৎসাহিত করা।

এইচডব্লিউআর বলছে, ২০২৫ সালের ১২ মে এক নির্দেশে সংশোধিত সন্ত্রাবিরোধী আইনের ক্ষমতা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের ওপর ‘সাময়িক’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় দলটির সভা, সমাবেশ এবং অনলাইন প্রোগ্রাম নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনের মাধ্যমেই এখন আওয়ামী লীগের কর্মী ও শান্তিপূর্ণ অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে দলীয় পক্ষপাতিত্ব সহ্য করেছে ঠিক সেই পথে হাঁটা উচিত নয়। তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দিয়ে কারাগার পূরণ হোক বা শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত দমনই হোক। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার বন্ধে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই সন্দেহজনক হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বহু আটক ব্যক্তি হেফাজতে দুর্ব্যবহার এবং চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করেছে। যা হাসিনা আমলের দমন-পীড়নের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।

গত ২৮ আগস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় একদল লোক অংশগ্রহণকারীদের ঘিরে ধরে হয়রানি করে এবং তাদের আওয়ামী লীগের অনুগত বলে অভিযুক্ত করে। সভায় থাকা সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না পুলিশের সাহায্য চাইলে, পুলিশ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো ১৬ জন অংশগ্রহণকারীকে আটক করে। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও ছিলেন।

শুরুতে পুলিশ তাদের নিরাপত্তার জন্য আটক করার কথা বললেও, পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের অভিযোগে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন, যা প্রত্যক্ষদর্শীরা অস্বীকার করেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সন্ত্রাস দমন আইনটি প্রণীত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সংশোধনীর লক্ষ্য হলো ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সদস্যদের অন্যায় কাজের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের দাবির ভিত্তিতেই কাজ করছেন অন্তর্বর্তী সরকার।

কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা দমন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করে। বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ সতর্ক করে দিয়েছে যে সন্ত্রাস দমন আইনের সংশোধনী ‘মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। যদিও ড. ইউনূস মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কোনো বিধিনিষেধের কথা অস্বীকার করেছেন।

অন্যদিকে, সরকার রক্ষণশীল মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা কখনও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের লক্ষ্য করে, আবার কখনও নারীর অধিকারের বিরোধিতা করে সহিংসতা চালাচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত মবের হামলায় কমপক্ষে ১৫২ জন নিহত হয়েছেন।

একজন রাজনৈতিক কর্মী এইচআরডব্লিউ’কে বলেছেন, এখন আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা- হয় সন্ত্রাসী তকমা নিয়ে জেলে যাওয়া, নয়তো মবের শিকার হওয়া। দোষীদের শাস্তি হোক, কিন্তু সেটা অবশ্যই একটি ন্যায্য বিচার ব্যবস্থার অধীনে হতে হবে। যা ইউনূস সরকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এবং বাংলাদেশ সরকার জুলাই মাসে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে, যার মাধ্যমে দেশে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য একটি মিশন খোলা হবে। এদিকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলী জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা, যা কেবল রাজনৈতিক দমনপীড়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এখন নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত বলেও পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:১১:২০   ৫৮ বার পঠিত