বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিধিভঙ্গের ৫১টি অভিযোগ

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিধিভঙ্গের ৫১টি অভিযোগ
বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫



এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বিধিভঙ্গের ৫১টি অভিযোগ

ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ৫১টি নিরাপত্তা বিধিভঙ্গের অভিযোগ পেয়েছে ডাইরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন বা ডিজিসিএ। বার্ষিক নিরীক্ষায় এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। যদিও খুঁজে পাওয়া এসব ত্রুটির কোনোটি গত মাসের ভয়াবহ বোয়িং ৭৮৭ দুর্ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তবে এই অনুসন্ধানে এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে ৭টি ত্রুটি গুরুতর। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এতে বলা হয়, নিরীক্ষায় পাওয়া ৫১টি ত্রুটির মধ্যে ৭টি ছিল লেভেল ওয়ান পর্যায়ের। যা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও)-এর মতে যাত্রী বা বিমানের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি স্বরূপ। এ ধরনের লঙ্ঘন গুরুতর ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ হতে পারে। যার মধ্যে লাইসেন্স বাতিল, সীমাবদ্ধতা আরোপ বা অনুমোদন স্থগিত করার মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত। বাকি ৪৪টি ত্রুটি লেভেল ২ পর্যায়ের। এগুলো তুলনামূলক কম গুরুতর হলেও বিমান পরিচালনার নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

ডিজিসিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এবারের বার্ষিক নিরীক্ষায় মোট ৮টি বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে ২৬৩টি নিরাপত্তা বিধিভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার অবস্থা সবয়েচে খারাপ। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পুরো নিরীক্ষার সময় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা জমা দেবে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে বৃহৎ বিমান সংস্থার ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক পর্যবেক্ষণ একটি স্বাভাবিক বিষয়, কারণ তাদের কার্যক্রমের পরিধি অনেক বেশি।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডিজিসিএ এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট প্রশিক্ষণের ঘাটতি, অনুমোদনহীন সিমুলেটরের ব্যবহার এবং ভুলভাবে সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যা চিহ্নিত করেছে। বিশেষত বোয়িং ৭৮৭ ও ৭৭৭ মডেলের কিছু পাইলটের আবশ্যিক পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া অনুসরণে ঘাটতি পাওয়া গেছে।

গত ১৫ বছরে তিনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। যার মধ্যে চলতি বছরের জুনে হয়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এতে ২৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে কোঝিকোড়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এই বিমানের একটি ফ্লাইট। তখন ২১ জনের মৃত্যু হয়। ১৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে মাঙ্গালোরে রানওয়ে থেকে ছিটকে পরে প্রাণ হারান ১৫৮ জন যাত্রী।

২০২০ সাল থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি মোট ২ হাজার ৪৬১টি টেকনিক্যাল ত্রুটির রিপোর্ট করেছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ছিল ইন্ডিগোর। যার পরিসংখ্যান এক হাজার ২৮৮টি। এরপর স্পাইসজেট। এদের ত্রুটির সংখ্যা ৬৩৩টি। এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস মিলে ত্রুটির সংখ্যা ৩৮৯টি।

ডিজিসিএ’র প্রধান ফাইজ আহমেদ কিদওয়াই বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, লঙ্ঘনগুলোকে আমি সমর্থন করি না, তবে সংস্থাগুলোর যে সেল্ফ রিপোর্টিং শুরু হয়েছে, যেটি একটি ইতিবাচক দিক। তিনি আরও জানান, আইসিএও’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মাত্র দুই বছর ভারতের দুর্ঘটনার হার আন্তর্জাতিক গড়ের চেয়ে বেশি ছিল। যদিও ডিজিসিএ এয়ার ইন্ডিয়া ও অন্যান্য সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তবুও বড় সংস্থাগুলোর মধ্যে এমন পর্যবেক্ষণ স্বাভাবিক বলেই মনে করছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা-সচেতন পরিবেশ গড়ে তোলাই এখন মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৪:২৬   ৮৩ বার পঠিত