
নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ হয়েছে সারা দেশে। প্রতিবাদ বিক্ষোভ, লাঠি মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এসব কর্মসূচি থেকে ধর্ষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি
জানানো হয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।
সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঠিমিছিল হয়েছে। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফরমের ব্যানারে বেলা পৌনে তিনটার দিকে টিএসসি’র রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। বাঁশের ছোট ছোট লাঠি হাতে রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে মিছিলটি আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মিছিলে ‘জান, মালের নিরাপত্তা দে নইলে গদি ছেড়ে দে’, ‘খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন রুখে দাঁড়াও জনগণ’, ‘অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার করো করতে হবে’, ‘ধর্ষকরা ধর্ষণ করে প্রশাসন কী করে?’, ‘ বেগম রোকেয়া শিখিয়ে গেছে লড়াই করে বাঁচতে হবে,’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয়। এর বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ধর্ষণ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সারা দেশব্যাপী ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করায় সরকারও এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। ধর্ষণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, নির্যাতন, নিপীড়নের অভিযোগের জন্য টোল ফ্রি হটলাইন চালু করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একের পর এক ঘটনা: শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে স্বামীর সঙ্গে রাগ করে চাঁদপুর থেকে লঞ্চে ঢাকার সদরঘাটে আসেন এক নারী। পরে তিনি থাকার জন্য বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় খুঁজছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পোস্তগোলা এলাকায় অজ্ঞাত চার যুবক তাকে আশ্রয়ের কথা বলে নয়াবাড়ী এলাকার নির্জন জায়গায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন টের পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’জনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। বাকি দুইজন পালিয়ে যায়। ওই নারী চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রোজার মধ্যে বাড়তি ক্লাসের কথা বলে পঞ্চম শ্রেণির এক নারী শিক্ষার্থীকে স্কুলে ডেকে নিয়ে যান ওই স্কুলের শিক্ষক মানিক। দুপুরে তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন। সবাই চলে গেলে শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ করে ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন। পরে মানিক নিজের মোটরসাইকেলে করে ছাত্রীকে বাড়ির পাশে রেখে যান। বাড়িতে গিয়ে মেয়ে কান্নাকাটি করে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। স্কুলে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পরেই সে বাড়ি চলে আসে। তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু পঞ্চম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী ও বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ওই গৃহবধূই নন। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের সঙ্গে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ ছাড়া দেশজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা পাশবিকতা আচমকা বেড়েছে। এখনো সিএমএইচের লাইফ সাপোর্টে বাঁচা-মরার লড়াই করছে মাগুরার ৮ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। বোনের বাসায় বেড়াতে এসে পাশবিকতার নির্যাতন হয়েছে শিশুটি।
সাম্প্রতিক সময় ছাড়াও অন্যান্য বছরগুলোতেও বিভিন্ন সময় আলোচনায় ছিল ধর্ষণকাণ্ড। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৬ হাজার ২৭২ জন নারী ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৯ জন। এরমধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮ জন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ১৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে এবং আত্মহত্যা করেছেন ১ জন। এসব ঘটনায় ২৯টি মামলা হয়েছে থানায়। আসকের তথ্য মতে ২০২৪ সালে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪০১ জন। এরমধ্যে একক ধর্ষণ ২৯৬ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১০৫ জন। ৩৪ জন ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন। থানায় মামলা হয়েছে ৩৩৪টি। ২০২৩ সালে ৫৭৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৪৩৬ জন ধর্ষণ ও ১৩৮ জনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৩৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। ৪৩৩টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ২০২২ সালে ৯৩৬ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭০৬ জনকে ধর্ষণ ও ২২৭ জনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। ৪৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৬৫৯টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে সারা দেশে ১ হাজার ৩২১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ১ হাজার ৬৬ জনকে ধর্ষণ ও ১৪১ জনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৯১৬টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৬২৭ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৩০২ জনকে ধর্ষণ ও ৩১৭ জনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। ৫৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১ হাজার ১৪০টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ১ হাজার ৬৬ জন ধর্ষণ ও ৩২৭ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৭৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৯৯৯টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশের তথ্যমতে ২০১৯ সালে সারা দেশে ২১ হাজার ৭৬৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় মামলা করেছেন। ২০২০ সালে সেটি আরও বেড়ে ২২ হাজার ৫১৭ জন ভুক্তভোগী মামলা করেন। এভাবেই ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬ জন। ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬ জন। ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১ জন। ২০২৪ সালে ১৭ হাজার ৫৭১ জন মামলা করেন। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৪৪০ জন মামলা করেছেন। সমাজ ও অপরাধ বিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলছে তাদের সুরক্ষার জন্য আইন করা হয়েছে, বিভিন্ন সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুরক্ষার জন্য কি কি আছে সেদিক দিয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। নারীদের সুরক্ষার জন্য সবই আছে। কিন্তু সেটি ঠিকমতো কাজ করছে না। শাস্তিভিত্তিক বিচারব্যবস্থায় যদি বিচার না হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে তাহলে ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়বেই। মোটাদাগে পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আইন কাজ করে না। তাই পুরুষরা কেন আইন মানবেন? যখনই আইন কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে না সেই আইন কেউ মানবে না। তিনি বলেন, নারী ও শিশুকে সুরক্ষিত রাখার জন্য রাষ্ট্র যে প্রাথমিকভাবে আইন, অন্যান্য সেবা ও নিরাপত্তা কাঠামো যে তৈরি করলো সেটি বাস্তবায়নের মধ্যে তাদের সুরক্ষিত রাখাই প্রধান দায়িত্ব।
দিন-রাত মাঠে বিক্ষুব্ধ ঢাবি শিক্ষার্থীরা: মাগুরায় নৃশংস ধর্ষণের শিকার শিশুসহ সম্প্রতি সংগঠিত সকল ধর্ষণের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা শনিবার রাতে বাইরে বেরিয়ে আসেন। একাত্মতা ঘোষণা করে শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’, ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনান্য হল থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসলে মুহূর্তেই লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে টিএসসি এলাকা। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী স্লোগানে প্রকম্পিত হয় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য। রাত ২টার দিকে একই স্থানে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এই আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন এবং দুই দফা দাবিসহ ধর্ষকদের আদালতে উপস্থাপন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এই দুই দফা হলো ১. অনতিবিলম্বে ধর্ষণবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২. আছিয়ার হত্যাচেষ্টাকারী এবং ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে এবং যতদিন পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়ন না হচ্ছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ তাদের কর্মসূচি বহাল রাখবে বলেও জানানো হয়। গতকাল সকালেও একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল করতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে একাধিক বিভাগের একাধিক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২০টিরও অধিক বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচ ধর্ষকদের বিচার না হওয়া অবধি তাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এসব বিভাগের মধ্যে আছে ইংরেজি, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র অধ্যয়ন, দর্শন, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগ, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সংগীত, আইআর, ভূগোল এবং পরিবেশ, ইতিহাস, বাংলা ও বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রসংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অব্যাহতভাবে ধর্ষণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সারা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বার্তা প্রেরক করে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা জানানো হয়। দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদলের এই কর্মসূচি পালিত হয়।
উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা ছিলেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তথাপি ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশে এখনো নারীরা প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবছর নারী দিবস আসলে নারী নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আলোচনা শুনলেও কার্যত সমাজে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে প্রথম নারী দিবসের মূল লক্ষ্যই হোক নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে একটি নিরাপদ সমাজ গঠন। নারী নির্যাতনসহ সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই আমরা সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এসব অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ফ্যাসিবাদী প্রশাসনিক কাঠামো ভাঙতে না পেরে আমাদের রাষ্ট্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বয়স, পেশা, ধর্ম নির্বিশেষে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। নারীরা নিজের ঘরে নিরাপদ না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ না, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারীর প্রতি ঘটা সহিংসতাকারীদের শনাক্ত করতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়, আটক করলেও জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়। আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড লিখিত থাকলেও তা কার্যকর করা হয় না। আমরা মনে করছি কাঠামোগতভাবে এই রাষ্ট্র ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম না, আমরা মনে করি আইনগত দুর্বলতা বাংলাদেশে ধর্ষক তৈরি করে। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে, নারীবিদ্বেষী আগ্রাসী মব, বিচারহীনতার বিরুদ্ধে। এমতাবস্তায়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে ধর্ষকদের শ্রেণি, বয়স, পেশা, ক্ষমতা নির্বিশেষে দ্রুততম সময়ে শনাক্তকরণ করতে হবে, আটক করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাবেশ করেছে ঢাবি শিক্ষকদের একাংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আয়োজনে এই সমাবেশ হয়। এতে ঢাবি’র বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। কাছাকাছি সময়ে রাজু ভাস্কর্যে মিছিল করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে ঢামেকের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদত দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা হয়েছে। ধর্ষককে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাহী ক্ষমতা যারা ছিল তারা তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। ভোট না দেয়া কারণে উলঙ্গ করে ভিডিও বানিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। এমনটা আর হতে দেয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল উদ্বেগ জানিয়েছে। সাদা দল বলেছে, এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশবাসীর ন্যায় আমরাও গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। মাগুরার আট বছরের মেয়ে শিশুর ধর্ষক ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারীদের অপরাধ এক ও অভিন্ন। এদের সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। এরকম ধর্ষক নামের নিকৃষ্টদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভাগগুলোর মিছিলে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ, সারা দেশে নারীদের ওপর ধর্ষণের নামে যে নারকীয় নির্যাতন চলছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১:৪৪:০৭ ৫৭ বার পঠিত