সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার প্রয়োজন: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রথম পাতা » জাতীয় » সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার প্রয়োজন: অ্যাটর্নি জেনারেল
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪



সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার প্রয়োজন: অ্যাটর্নি জেনারেল

সংবিধান ও বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নয়, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার প্রয়োজন।’

তিনি কেন এই অনুচ্ছেদটির সংস্কার চান, সেই ব্যাখ্যায় আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ সদস্যরা ফ্লোর ক্রসিং করতে পারেন না। অর্থাৎ সংসদে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সংসদ সদস্য স্বাধীনভাবে তার মতামত দিতে পারেন না। কার্যত বাংলাদেশের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে।

এগুলো সংবিধান সংস্কার কমিটিতে যারা আছেন তারা দেখবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার প্রয়োজন।’

তবে সংবিধান সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে কোনো আলোচনাও হয়নি। এমনকি কোনো আভাসও দেওয়া হয়নি বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে নিজ দপ্তরে বসে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

‘রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া’ সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি- (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৬টি বিষয় সংস্কারে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর মধ্যে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. শাহদীন মালিক।

আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে বলে জানান সরকার প্রধান ড. ইউনূস। এর মধ্যে বিচার বিভাগ ও সংবিধানের সংস্কার নিয়ে কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রয়োজন

প্রধান উপদেষ্টার সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে উদ্যোগটা নিয়েছেন সেটা গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই এই উদ্যোগটা নিয়েছেন। বিচার বিভাগ, সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে জনগণের মধ্যে একটা দাবি আছে। সেই দাবিটাকে ধারণ করেই উনি উদ্যোগটা নিয়েছেন। এটা নিশ্চিতভাবেই একটা ইতিবাচক উদ্যোগ বলে আমি মনে করি।’

বিচার বিভাগের সংস্কার কেন প্রয়োজন, সে ব্যাখ্যায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই কারণে প্রয়োজন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি। শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীব্যাপী বিচার বিভাগের ধারণাটাই হলো বিচার বিভাগের ক্ষমতা সার্বভৌম। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থেকে শুরু করে বিচারিক আদালত সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিগত সময় দেখা গেছে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করা হয়েছে। যারা গণতন্ত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত, যারা খুনখারাবি করেছে, যারা লুটপাট করেছে, দেখা গেছে তাদের অনেকটা ভূমিকা রেখেছে বিচার বিভাগ। এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রয়োজন।’

এই সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাটা খুবই ন্যূনতম

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাংলাদেশর যে বাস্তবতা বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি, উনারা (অধস্তন আদালতের বিচারক) ধরেই নিয়েছিলেন উনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। উনারা ভুলে গিয়েছিলেন যে উনারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।’

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কোনো সাংবিধানিক কোনো ক্ষমতা নাই। অ্যাপারেন্টলি (দৃশ্যত) দেখা যায় দুটো ক্ষমতা আছে। একটা ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা, আরেকটা হলো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেই যে কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারবেন না। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাকে বলবে, তাকে নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রধান বিচারপতির নিয়োগেও রাষ্ট্রপতি সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেননি। ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিকভাবে কতটুকু ক্ষমতাবান, এটা যারা সংবিধান বিশেষজ্ঞ আছেন, তারা জানেন। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বলতে পারি এই সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাটা খুবই ন্যূনতম।

অ্যাটর্নি জোনরেল বলেন, আমি চাই প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পাশে দাঁড়াক। বিচার বিভাগ সাংবিধানিক বিধান এবং আইনগত বিধানগুলো মানুক। এ উদ্যোগটা (সংস্কার উদ্যেগ) আমি মনে করি অনেক ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের সাথে সবার একসাথে কাজ করা উচিত। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আমার যতটুকু ভূমিকা রাখা প্রয়োজন আমি ততটা রাখার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ সময়: ২:৫৩:৫০   ৬৮ বার পঠিত  




জাতীয়’র আরও খবর


খালেদা জিয়ার জন্য বানানো কারাগারে এখন থাকবেন আওয়ামী লীগ নেতারা
সাবেক এমপি শম্ভুর স্ত্রীর ২ ফ্ল্যাট জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সাবেক এমপিসহ আওয়ামী লীগের ৯ জন গ্রেপ্তার
জামিন পাননি খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা মামলার আসামি
কক্সবাজারের সাবেক এমপি জাফর আলম ৪ দিনের রিমান্ডে
আদালতে পুলিশের ওপর চটলেন হাজী সেলিম
গ্রেনেড হামলা: তারেক-বাবরদের খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি ৬ মে
হাসিনা-পুতুলসহ পেছালো ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার প্রতিবেদন
টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যায় অংশ নেন দুইজন
সংশোধন হচ্ছে সরকারি চাকরি আইন রাজপথে ও সচিবালয়ে বিক্ষোভ করলে তদন্ত ছাড়াই চাকরি যাবে

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ