বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে মামদানির ঐতিহাসিক জয়: ইহুদি ডেমোক্রেট রাজনীতিতে বিভাজনের ইঙ্গিত

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » নিউইয়র্কে মামদানির ঐতিহাসিক জয়: ইহুদি ডেমোক্রেট রাজনীতিতে বিভাজনের ইঙ্গিত
রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫



নিউইয়র্কে মামদানির ঐতিহাসিক জয়: ইহুদি ডেমোক্রেট রাজনীতিতে বিভাজনের ইঙ্গিত

নিউইয়র্কের পরবর্তী মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানির বিজয় শুধু শহরের রাজনীতিতেই নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মধ্যেও নতুন এক রাজনৈতিক বিভাজনের রেখা টেনে দিয়েছে। ইসরাইলের বাইরে সর্বাধিক ইহুদি জনসংখ্যার এই শহর এখন এক গভীর আদর্শিক পরিবর্তনের সাক্ষী। ৩৪ বছর বয়সী মুসলিম অভিবাসী ও ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি সহজেই পরাজিত করেছেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে।  এবারের মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতির কারণে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও মামদানি সেই বিতর্কের মাঝেও জয় নিশ্চিত করেছেন।

গাজা সংঘাত ঘিরে ইসরাইলের নীতিতে হতাশ তরুণ ইহুদি ভোটারদের একাংশ মামদানির পক্ষে দাঁড়ান। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের নিচের মাত্র ৫০ শতাংশ ইহুদি মনে করেন ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনা গ্রহণযোগ্য। যেখানে ৫০ ঊর্ধ্বদের মধ্যে এই হার ৬৮ শতাংশ। নির্বাচনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি ভোটার মামদানিকে ভোট দিয়েছেন। যা অভ্যস্ত প্রভাবশালী ইহুদি নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। নিউইয়র্কের ইউজেএ-ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিন্ডি পুপকো বলেন, অনেকেই এক ধরনের অনিশ্চয়তায় আছেন। মেয়র মামদানি মেয়রের পদে বসে কেমন আচরণ করবেন, তা অনেকেইরই অজানা।

মামদানির সমর্থনে হওয়া কিছু বিক্ষোভে উচ্চারিত ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা’ স্লোগান নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। যা কেউ কেউ ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান বলে মনে করেন। যদিও মামদানি ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, তিনি নিজে এই স্লোগান ব্যবহার করবেন না এবং অন্যদেরও নিরুৎসাহিত করেন। তিনি প্রকাশ্যে বিডিএস আন্দোলনের (বয়কট, ডিইভেসমেন্ট, স্যাঙ্কশন) সমর্থক। যা ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বয়কটের আহ্বান জানায়।

অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগ (এডিএল) মামদানির পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণে ‘মামদানি মনিটর’ চালু করেছে এবং ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ জানাতে একটি হটলাইনও খুলেছে। সংগঠনের প্রধান জনাথন গ্রিনব্লাট বলেন, আমাদের কাজ খুবই সহজÑ ইহুদি জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

ডেমোক্রেটদের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের সুযোগ নিতে রিপাবলিকানরা এখন ইহুদি ভোটারদের দিকে ঝুঁকছে। ইসরাইলের ঘটিষ্ঠ মিত্র প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যে ইহুদি মামদানিকে ভোট দিয়েছে, সে বোকা। তবে তার নিজের দলও সাম্প্রতিক সময়ে ডানপন্থী ইহুদিবিদ্বেষী প্রবণতার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে টাকার কার্লসনের পডকাস্টে শ্বেত জাতীয়তাবাদী নিক ফুয়েন্টেসকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর এই সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে।

মামদানির প্রচারণার মূল প্রতিশ্রুতি ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় ও বাসস্থান সংকট নিরসন। যা তরুণ প্রগতিশীল ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এমনকি সমালোচক গ্রিনব্লাটও স্বীকার করেছেন, তিনি যেভাবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কষ্টের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন, সেটিই তার জয়ের চাবিকাঠি।

মামদানির ইহুদি সমর্থকরা বলছেন, এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে ইহুদি ভোট আর এককভাবে ইসরাইলের প্রতিনিধিত্বশীল নয়। ইসরাইলি বংশোদ্ভূত ২৬ বছর বয়সী রনি জাহাভি-ব্রুনার বলেন, আমি মামদানিকে ভোট দিয়েছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলা ঝুঁকি নয়, এটি নৈতিক দায়িত্ব। অন্যদিকে ম্যানহাটনের ইহুদি ভোটার অ্যালিসন ডেভলিন বললেন, আমি হতাশ ও উদ্বিগ্ন। আমি প্রকাশ্যে ইহুদি ও জায়নিস্ট। এখন নিউইয়র্ক শহর কতটা নিরাপদ, জানি না। তরুণ প্রজন্মের ইহুদি ভোটার করিন গ্রিনব্লাট মনে করেন, গাজা যুদ্ধ ইহুদি রাজনীতিতে নতুন এক মোড় এনে দিয়েছে। এখন স্পষ্ট, ইহুদি সমাজ একরকম নয়Ñ কেউ ফিলিস্তিনের পক্ষে, কেউ ইসরাইলের, আবার কেউ রাজনীতির বাইরে। মামদানি বারবার বলেছেন তিনি ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে। আমাদের উচিত তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া এবং আন্তঃসম্প্রদায় ঐক্য গড়ে তোলা।

সূত্র: রয়টার্স।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৫:৩৩   ৭ বার পঠিত