শনিবার, ৩০ আগস্ট ২০২৫

তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

প্রথম পাতা » সুপ্রিমকোর্ট » তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস
শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫



তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছাকৃত কি না, সে বিষয়ে গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয় গত ২১ আগস্ট। সেদিন রায়ের জন্য আদালত আজকের তারিখ ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রায় দেওয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে এজলাসে আসেন বিচারপতিরা। আসন গ্রহণের পর প্রধান বিচারপতি রায় ঘোষণা শুরু করেন। সোয়া ১০টার দিকে রায় ঘোষণা শেষ হয়।

হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আপিল বিভাগ বলেন, যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত-এই অংশটুকু প্রত্যাহার করা হলো। ক্ষমতার পৃথক্করণ নীতি অনুযায়ী, পলিসি বিষয়ে সাধারণভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয়।

শুধু পর্যবেক্ষণ ছাড়া হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের কোনো দুর্বলতা ও বেআইনি কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রত্যাহার ও সংশোধন সাপেক্ষে পর্যবেক্ষণসহ সর্বসম্মতিতে আপিল খারিজ করা হলো। আর যারা আপিল করেননি, তাদের ক্ষেত্রসহ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকর অংশ বহাল রাখা হলো।

আপিল বিভাগ বলেন, আমরা মনে করি, হাইকোর্ট বিভাগ ডেথ রেফারেন্স খারিজ, আপিল ও জেল আপিল মঞ্জুর এবং বিচারিক আদালতের সাজা বাতিল করে যে রায় দিয়েছেন, তা ন্যায়সংগত ছিল। কারণ, অভিযুক্ত মূল পরিকল্পনাকারী মুফতি আব্দুল হান্নানকে প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার দীর্ঘ চার বছর পর দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয়েছিল।

তাও যখন তিনি দীর্ঘ সময় কনডেমড সেলে আটক ছিলেন। ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আব্দুল হান্নানকে পরীক্ষা করার আগেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর (অন্য মামলায়) হওয়ায় প্রসিকিউশনের মামলাটি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। তাই তার স্বীকারোক্তিগুলো বিশ্বাসযোগ্যতার বিচারে টেকে না।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এছাড়া অন্য আসামিদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান।

রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, দ্বিতীয়বার জবানবন্দি আইনত গ্রহণযোগ্য না। আর এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে করা হয়নি। অন্য আসামিরাও কেউ স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেননি। হাইকোর্ট বিভাগের খালাসের রায় বহাল আছে।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে এই মামলায় জড়িত করেছিল। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে তারেক রহমান নির্দোষ। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হয়েছে-আইভি রহমানসহ যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বিচার শেখ হাসিনা চাননি।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুফতি হান্নানকে কনডেম সেল থেকে এনে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। আর ৩৪২ ধারায় তাকে পরীক্ষা করার আগেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আপিল বিভাগের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে এই আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। যারা মারা গেছেন, তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা আছে। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া কাউকে সাজা দেওয়া যায় না।

এর আগে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১ ডিসেম্বর সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে।

পরে চলতি বছরের ১ জুন লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে দলটির ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়।

২০১৮ সালে বিচারিক আদালত দুটি মামলারই রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৪:০১   ৯ বার পঠিত