মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

জেরুজালেমে ইসরাইলিদের র‌্যালি, মুসলিমবিরোধী স্লোগান

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » জেরুজালেমে ইসরাইলিদের র‌্যালি, মুসলিমবিরোধী স্লোগান
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫



জেরুজালেমে ইসরাইলিদের র‌্যালি, মুসলিমবিরোধী স্লোগান

রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে মুসলিমদের আবাসিক এলাকার ভিতর দিয়ে র‌্যালিতে অংশ নিয়েছে ইসরাইলি হাজার হাজার ইহুদি। সেখানে তারা বর্ণবাদী স্লোগান দিতে থাকে। বলতে থাকে- গাজা আমাদের, আরবরা নিপাত যাক এবং তাদের বাড়িঘর পুড়ে যাক। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম ও পবিত্র স্থাপনাগুলোকে দখল করার বার্ষিকী উপলক্ষে এই র‌্যালি করে তারা। এতে অর্থায়ন ও উৎসাহ দেয় জেরুজালেম শহরের সরকার ব্যবস্থা। কিন্তু ওই সময়ে ফিলিস্তিনিদের যেসব জায়গা ও স্থাপনা দখল করে ইসরাইল, তার কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, ওল্ড সিটিতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় সোমবার অনুষ্ঠিত হলো বার্ষিক ফ্ল্যাগ মার্চ। এ ঘটনায় সোমবার সকালের দিকেই মুসলিম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী পোশাক পরা যুবকরা হিজাব পরিহিত নারীদের গালাগালি ও থুতু ছুঁড়ে দেয়, দোকান থেকে পণ্য চুরি করে, ক্যাফে তছনছ করে এবং কমপক্ষে একটি বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে।

ক্যাফে মালিক রেমন্ড হিমো যখন তরুণদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তখন এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এখনই দোকান বন্ধ করো, না হলে আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারব না। ফলে দুপুর ১টার মধ্যেই বেশির ভাগ দোকান বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা দরজা-জানালা আটকে ঘরে আশ্রয় নেন। জেরুজালেমভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ইর আমিম’-এর গবেষক আবিভ তাতারস্কি বলেন, এই মিছিল মানুষকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করে, নিজের শহরে অনিরাপদ করে তোলে এবং মূলত এই বার্তাটাই দেয়- তোমাদের এখানে থাকার অধিকার নেই, এই জায়গা আমাদের।

মধ্যাহ্নের পর থেকে আরও বড় দল শহরে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন স্থানে চিৎকার করতে থাকে ‘তাদের গ্রাম পুড়ুক’, ‘আরবদের মৃত্যু হোক’। দামাস্কাস গেট এলাকায় একটি বিশাল ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জেরুজালেম ১৯৬৭, গাজা ২০২৫’-  যা গাজার সম্পূর্ণ সামরিক দখলের হুমকি নির্দেশ করে। আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘নাকবা ছাড়া বিজয় নেই’- যা ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বিতাড়নের প্রতি ইঙ্গিত দেয়। এই মিছিলের আয়োজক ‘আম ক’লাভি’ নামের সংগঠনের সভাপতি বারুখ কাহানে। তিনি ইহুদি আধিপত্যবাদী ও নিষিদ্ধ কাচ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মেইর কাহানের ছেলে। মিছিলকারীদের অনেকেই কাচ পার্টির প্রতীকসহ টি-শার্ট পরেন। কিছু গ্রুপ যায় স্কুলের ব্যানার নিয়ে। পূর্বে বহুবার সহিংসতা ঘটলেও এবার পুরনো শহরে পুলিশি উপস্থিতি ছিল অপেক্ষাকৃত কম এবং তারা অনেক ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করেনি। কেবল ‘স্ট্যান্ডিং টুগেদার’ নামের একটি সংগঠনের কর্মীরাই বেগুনি জ্যাকেট পরে মুসলিমদের পক্ষে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সহিংসতা ঠেকানোর একমাত্র নাগরিক প্রতিরোধ হিসেবে। ইসরাইলের অতি-ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও মিছিলে অংশ নেন। তিনি এর আগে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে এক উস্কানিমূলক ‘প্রার্থনা সফর করেছিলেন, যদিও সেখানকার নিয়মানুযায়ী ইহুদিদের ধর্মীয় আচার নিষিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেন যখন তিনি তার মন্ত্রিসভার বৈঠক বসান পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ান এলাকায়। বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনি পাড়া এবং একই সঙ্গে ঐতিহাসিক ‘বাইবেলিকাল জেরুজালেম’-এর অংশ।

ইসরাইলি আইনজীবী ও জেরুজালেম বিশেষজ্ঞ ড্যানি সাইডম্যান এই বৈঠককে ‘রাজনৈতিক অগ্নিকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এই এলাকায় অতীতকে অস্ত্র বানানো হচ্ছে, যাতে বর্তমান ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে একটি কৃত্রিম প্রাচীন ইসরাইল পুনর্গঠন করা যায়। এই পতাকা মিছিল পূর্বেও সহিংসতা ও যুদ্ধের সূচক হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালে একই আয়োজন থেকে শুরু হয় ১১ দিনের ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ। বিশ্লেষকদের মতে, এমন মিছিল এবং সরকারের অবস্থান ইসরাইলের ধর্মীয় আধিপত্যবাদকে বৈধতা দেয়, যা শুধু জেরুজালেম নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য চরম বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৪:২৩   ৪১ বার পঠিত