মানবতাবিরোধী অপরাধ : অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজের রেকর্ড সম্প্রচার করা যাবে

প্রথম পাতা » সুপ্রিমকোর্ট » মানবতাবিরোধী অপরাধ : অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজের রেকর্ড সম্প্রচার করা যাবে
বুধবার, ২১ মে ২০২৫



মানবতাবিরোধী অপরাধ : অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজের রেকর্ড সম্প্রচার করা যাবে

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেসব মামলার বিচারকাজের রেকর্ড গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচার করা যাবে। তবে সেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশের এমন বিধান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারকক্ষে। মঙ্গলবার (২০ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন‍্য কোর্টরুম ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ট্রায়ালের যেকোনো পর্ব আদালতের অনুমতিক্রমে সরাসরি কিংবা রেকর্ডকৃত পদ্ধতিতে গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক মাধ‍্যমে প্রচারিত হতে পারবে।’

বিচারকাজ প্রচার বা সম্প্রচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের এজলাস (বিচার) কক্ষে যে প্রযুক্তি (ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম, কম্পিউটার, স্ক্রিন) স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ওই পোস্টে যুক্ত করেছেন চিফ প্রসিকিউটর। ছবিতে চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিমকে দেখা গেছে।

১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে গত বছর ২৪ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার, যার শিরোনাম ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪।’ এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটির ৯ ধারায় ‘শুনানির রেকর্ডিং এবং সম্প্রচার’ শিরোনাম দিয়ে ৯(ক) নামে একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এই উপধারাটির আবার দুটি ভাগ।

উপধারা ৯(ক)(১) -এ বলা হয়েছে, ‘ট্রাইব্যুনাল শুনানির বা তার কিছু অংশের অডিও-ভিজ্যুয়াল রেকর্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

৯(ক)(২) -এ বলা হয়েছে, ‘অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্ধারিত যেকোনো শর্ত অনুসারে, ট্রাইব্যুনাল ইন্টারনেট বা অন্য কোনও মাধ্যমে শুনানির অডিও বা ভিডিও সম্প্রচার উপলব্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

চিফ প্রসিকিউটরের এমন পোস্টের পর ট্রাইব্যুনালের খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও বার্তা দেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ রেকর্ড ও সম্প্রচার সংক্রান্ত ৯(ক) ধারার বিধান তুলে ধরে প্রসিকিউটর বলেন, ‘আজকে ট্রাইব্যুনালের সেই সেটাপটা সম্পন্ন হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের কোর্ট রুমের (এজলাস বা বিচার কক্ষ) ভেতরে যে বিচারকাজ হবে, ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে সেটিকে পাবলিকলি ব্রডকাস্ট করা যাবে বা সেটিকে ধারণ করে পরবর্তীতে তা ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে।’

বিচারের স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যারা ট্রাইব্যুনালে আসতে পারবেন না, তারাও যেন যার যার অবস্থান থেকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেখতে পারেন সে জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এ দিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে জন্য প্রথমে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠনের পর গত বছর ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরে ১৭ অক্টোবর প্রথম বিচারকাজে বসেন পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক কাজের প্রথম দিনই শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগে যে সব মামলা হয়েছে, তার মধ্যে দুইটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ২০ এপ্রিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ সদস্য এই মামলার আসামি। আর দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদনটি হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন জনের বিরুদ্ধে। গত ১২ মে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ দুটি যাচাই-বাছাই করছেন। অধিকতর বা পুনঃতদন্তের প্রয়োজন না হলে নির্ধারিত তারিখে ট্রাইব্যুনালে মামলা দুটির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৬:২১   ১৪ বার পঠিত  




সুপ্রিমকোর্ট’র আরও খবর


রিট খারিজ, ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই
বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ
শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা হিটু শেখের ডেথ রেফারেন্সের নথি হাইকোর্টে
দুর্নীতি মামলায় জোবাইদা রহমানের আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার
ইশরাককে শপথ না পড়ানোর রিটের আদেশ বৃহস্পতিবার
মানবতাবিরোধী অপরাধ : অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজের রেকর্ড সম্প্রচার করা যাবে
গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করতে হাইকোর্টের রুল
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা: মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এক আসামির আপিল
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিট
জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠারও আগে: শিশির

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ