
গুম ফেরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, তাদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতসহ গুম-খুনে জড়িতদের বিচার ও আওয়ামী আমলের নির্যাতনমূলক আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ভয়েস অব এনফোর্সড ডিসএপিয়ারড পার্সনস (ভয়েড)।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ভয়েডের উদ্যোগটি মানবতার পক্ষে, ন্যায়বিচারের পক্ষে। গুমের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি ব্যক্তির বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
গুম থেকে ফিরে আসা নির্যাতিত ব্যক্তি ভয়েডের চিফ কো-অর্ডিনেটর মারুফ জামান বলেন, আমি নিজে এ ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার। আজ আমি কথা বলছি যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়, আমরা যাতে ক্ষতিপূরণ পাই এবং হাসিনার বানানো দমন ও নিপীড়নমূলক আইন বাতিল হয়।
সংগঠনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর মাসরুর আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ভয়েডের অধিকাংশ সদস্য ঋণে জর্জরিত। আমরা চাই দুর্নীতিবাজদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে সেখান থেকে গুমের সারভাইভারদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। শেখ হাসিনা, তার দলের সদস্য, ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন বাহিনীর যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গুমের পক্ষের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বক্তারা বলেন, বিগত সরকারের আমলে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এবং একটি ভীতির রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। সর্বদাই গুম হওয়ার এক আতঙ্কে বসবাস করতে হতো। সুতরাং আজকের এই সাম্রাজ্যবাদী পরিবেশে আমাদের নিজেদেরই সচেতন থাকতে হবে।
যারা ২৪-এর আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিল, তারা আজ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদের ফেলা যায়, কিন্তু ফ্যাসিবাদ এত সহজে ফেলা যায় না। সুতরাং দাবি আদায়ে নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে।
সংগঠনটির দাবিগুলো হলো-
১. সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থি সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) বিল ২০১৩ বাতিল করতে হবে।
২. বিনা বিচারে হত্যা করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. মিথ্যা মামলায় বন্দি সব ব্যক্তির অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অ্যান্টি টেরোরিজম কালো আইনে সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে নিঃশর্ত প্রত্যাহার কর।
৪. গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিবারকে যথাযথ তথ্য দিতে হবে।
৫. রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থে করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। সন্ত্রাসবিরোধী কালো আইনে বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৬. বেআইনি গুমের শিকার সকল ব্যক্তির পুনর্বাসনের জন্য আলাদা সরকারি বিভাগ গঠন করো অথবা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসো।
৭. গুমের শিকার ব্যক্তিদের আজীবন পেনশন ও চিকিৎসা সহায়তা দিতে হবে।
৮. গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মিথ্যা মামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
৯. র্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসিসহ বিভিন্ন বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের দায় স্বীকার করে সরকারকে আনুষ্ঠানিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
১০. এসব অপরাধের সব সরকারি নথি প্রকাশ করতে হবে, যাতে সত্য জনগণের সামনে আসে।
১১. রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে ভিকটিমদের পরিবার ও পুরো জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন- এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় মুক্তি পরিষদের সম্পাদক ড. ফাইজুল হাকিম লালা, নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং গুম থেকে ফিরে আসা ব্রিগেডিয়ার আমান আজমি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৬:০৭ ৬০ বার পঠিত