আইইডিসিআর’র সার্ভিলেন্স আইসিইউতে ৪১ শতাংশ জীবাণু কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ করছে না

প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আইইডিসিআর’র সার্ভিলেন্স আইসিইউতে ৪১ শতাংশ জীবাণু কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ করছে না
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫



আইসিইউতে ৪১ শতাংশ জীবাণু কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই কাজ করছে না

দেশে অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর হার দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশের আইসিইউগুলোতে এমন জীবাণু বাড়ছে যেগুলোর ওপর কার্যকর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই নেই। জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিলেন্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনার ৪১ শতাংশ সন্দেহভাজন প্যান-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর), অর্থাৎ পরীক্ষিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করেনি। সামগ্রিকভাবে হাসপাতালের নমুনায় বহু-ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর হার ৪৬ শতাংশ, আর আইসিইউতে তা ৮৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

সোমবার আইইডিসিআর’র মিলনায়াতনে এক সেমিনারে এই সার্ভিলেন্সের ফলাফল তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব।অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশ দ্রুতই এক বিপজ্জনক ‘পোস্ট অ্যান্টিবায়োটিক সংকট’-এর দিকে এগোচ্ছে। যেখানে সাধারণ সংক্রমণও মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলতে পারে।অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব বলেন, গুরুতর সংক্রমণে দায়ী প্রধান ব্যাকটেরিয়ার বড় অংশ এখন এমন প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করেছে যে, চিকিৎসায় সর্বাধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলেও রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

জাতীয় এএমআর সার্ভিলেন্স ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ চক্রে (জুলাই ২০২৪–জুন ২০২৫) কেস-ভিত্তিক ও ল্যাব-ভিত্তিক নজরদারিতে সংগৃহীত ৯৬ হাজার ৪৭৭ রোগীর ক্লিনিক্যাল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সব নমুনা মিলিয়ে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি ৭৭ শতাংশ; গ্রাম পজিটিভ পাওয়া গেছে ২২ শতাংশ। শনাক্ত জীবাণুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ই-কোলি (ঊ. পড়ষর), ৩৫ শতাংশ। এরপর ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া (K. pneumoniae), যা শতকরা বিবেচনায় ১৯.২ শতাংশ।

সার্ভিলেন্সে ১২৩টি ড্রাগবাগ কম্বিনেশনের সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় ৩৮টির সংবেদনশীলতা বেড়েছে, ৭৯টির কমেছে এবং ৬টির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইসিইউর পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক। সেখানে পাঁচটি প্রধান প্যাথোজেনের জন্য ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষায় মাত্র পাঁচটিতে সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে, আর মাত্র একটি কম্বিনেশনে তা ৬০-৮০ শতাংশ। বাকি সব ক্ষেত্রেই সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা গুরুতর রোগীর চিকিৎসাকে সরাসরি ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ক্রিটিক্যাল প্রাইঅরিটি’ তালিকায় থাকা জীবাণুগুলোর প্রতিরোধক্ষমতাও দ্রুত বাড়ছে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সময়কালে ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়ার সেফট্রিয়াক্সোন রেজিস্ট্যান্স ৪০.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫২.২ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে মেরোপেনেম রেজিস্ট্যান্স ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯.২ শতাংশ। অ্যাসিনেটোব্যাক্টরের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ। মেরোপেনেমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা ৪৬.৭ শতাংশ থেকে ৭১ শতাংশে উঠে গেছে। প্যান-ড্রাগ–রেজিস্ট্যান্ট নমুনার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি, ২৭ শতাংশ, পাওয়া গেছে অ্যাসিনেটোব্যাক্টরে।স্বাস্থ্য সূচকে (এসডিজি লক্ষ্য ৩.ডি.২) রক্তের নমুনায় এমআরএসএ (গজঝঅ) পাওয়া গেছে ৫৩.৯ শতাংশ এবং ইএসবিএল উৎপাদক ই-কোলি পাওয়া গেছে ৮৪.৩ শতাংশ যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অত্যন্ত উচ্চ। কেস-ভিত্তিক নজরদারিতে সবচেয়ে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ছিল সেফট্রিয়াক্সোন (৩৩ শতাংশ) ও মেরোপেনেম (১৬ শতাংশ)। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের তথ্য হলো, হাসপাতালে ‘ওয়াচ’ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার গত বছরের ৭৭ শতাংশ থেকে এবার ১০৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে যা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নমুনায় ভিন্ন প্রবণতা দেখা গেছে। ক্যাম্প এলাকার মলের নমুনায় সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে ভিব্রিও কলেরা (V. cholerae), যার টেট্রাসাইক্লিন সংবেদনশীলতা ১০০ শতাংশ এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন ৯৭ শতাংশ। ডায়রিয়া চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওষুধও এই অ্যাজিথ্রোমাইসিন।

সব মিলিয়ে সার্ভিলেন্সের ফলাফল বলছে, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর হার দ্রুত বাড়ছে, বিশেষত আইসিইউ-কেন্দ্রিক সংক্রমণে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন গাইডলাইন অনুসরণ, ল্যাব সক্ষমতা বাড়ানো এবং অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ জোরদার না হলে পরিস্থিতি দ্রুতই আরও অবনতি ঘটাবে। অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারালে সাধারণ সংক্রমণও জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এখনই সতর্কতা জরুরি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক ডা. শাহ মনির হোসেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু  হোসেন মো. মইনুল আহসান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫১:২৩   ৭৯ বার পঠিত  




প্রধান সংবাদ’র আরও খবর


সংকীর্ণ রশির ওপর ভারসাম্য রক্ষা কেন পুতিনের সফর ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এক মহাশিক্ষা
ভারতে অবস্থান প্রসঙ্গে  হাসিনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে : জয়শঙ্কর
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনা ‘নীতিগত ভুল’: জাতিসংঘ মহাসচিব
সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ
ধানমন্ডি ৩২–এ ফুল দিতে গিয়ে মারধরের শিকার সেই রিকশাচালককে অব্যাহতির সুপারিশ
সাম্প্রতিক ভূমিকম্প সতর্ক সংকেত: প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ
গাজায় নতুন গণকবরের সন্ধান হত্যার পর বুলডোজার দিয়ে বালি চাপা
খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ