মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পারমাণবিক কূটনীতি ভেস্তে যাওয়ায় ইরানের ওপর ফের জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » পারমাণবিক কূটনীতি ভেস্তে যাওয়ায় ইরানের ওপর ফের জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫



পারমাণবিক কূটনীতি ভেস্তে যাওয়ায় ইরানের ওপর ফের জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে ইরানের আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে এক দশক পর শনিবার মধ্যরাত থেকে ইরানের ওপর পুনরায় জাতিসংঘের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি হতে যাচ্ছে। কোনো অপ্রত্যাশিত সমঝোতা না হলে এই ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা শুক্রবার জানিয়েছে, পরিদর্শকদের ইরানের স্থাপনাগুলোতে ফিরতে দেয়া হয়েছে। তবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এক সপ্তাহের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতির পরও ইউরোপীয় শক্তিগুলো অগ্রগতি যথেষ্ট মনে না করায় নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত মাসে বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি অভিযোগ করে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে স্বচ্ছ হয়নি এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে গৃহীত পাল্টা পদক্ষেপসহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরই তারা স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া চালু করে। শনিবার ইরান এই তিন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের পরামর্শের জন্য তেহরানে ডেকে নেয়।

শনিবার রাতে নিষেধাজ্ঞা বহাল হলে তা কার্যকর হবে রবিবার ০০:০০ জিএমটি থেকে (নিউইয়র্ক সময় তখন শনিবার রাত ৮টা)। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে বৈশ্বিকভাবে লেনদেন নিষিদ্ধ হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার কৌশল হিসেবে চাপ প্রয়োগ করছে। তিনি বলেন, যদি কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ মেটানোই লক্ষ্য হতো, আমরা তা সহজেই করতে পারতাম। আবারও জোর দিয়ে তিনি বলেন, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না। তিনি জানান, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন প্রস্তাব দিয়েছেনÑ ইরান যদি তার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত সরিয়ে ফেলে, তবে এক মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত করা হবে। কিন্তু পেজেশকিয়ান প্রশ্ন তোলেন, প্রতি মাসে গলায় ফাঁস ঝোলানোর মতো ফাঁদে আমরা কেন পা দেব? তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন ইউরোপীয়দের সমঝোতা থেকে বিরত রাখার জন্য। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ক্ষতি করতে চায় না এবং আলোচনায় রাজি। তবে পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, তিনি আগের আলোচনায় চুক্তি থেকে পিছিয়ে গেছেন এবং ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করেই আলোচনা ভেঙে যায়।

রাশিয়া ও চীনের অবস্থান: নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও সব দেশ তা বাস্তবায়ন করবে কিনা অনিশ্চিত। রাশিয়ার উপ-রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, মস্কো এই পুনঃনিষেধাজ্ঞাকে অকার্যকর মনে করে। রাশিয়া ও চীন নিরাপত্তা পরিষদে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বিলম্ব চাইলেও পর্যাপ্ত ভোট পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র আগেই একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং অন্য দেশগুলোকে ইরানি তেল কেনা বন্ধে চাপ দিচ্ছে। তবে চীনা কোম্পানিগুলো সে চাপ অগ্রাহ্য করছে। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়। ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ চাপ দেয়ার কৌশল নেন। নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যত সেই স্থগিত ব্যবস্থা বাতিল করছে। আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপ জানায়, ইরান ইতিমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলে এই স্ন্যাপব্যাককে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে একবার কার্যকর হলে এটি সহজে প্রত্যাহারযোগ্য নয় এবং এর ফলে ইরানের দুর্বল অর্থনীতিতে (উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা) আরও চাপ সৃষ্টি হবে। জাতিসংঘে ভাষণে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত না করার আহ্বান জানান এবং ইঙ্গিত দেন, প্রয়োজনে আবারও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা চালাতে প্রস্তুত। ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, জুন মাসে ইসরাইলের ১২ দিনের হামলায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। পেজেশকিয়ান অবশ্য হুঁশিয়ারি দেন, ইরান নিষেধাজ্ঞার জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি  থেকে বেরিয়ে আসবে না। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু অজ্ঞাত শক্তি কেবল একটি অজুহাত খুঁজছে, যাতে গোটা অঞ্চলকে আগুনে জ্বালিয়ে দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৬:০৭   ২১ বার পঠিত