
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) বিধিবহির্ভূত নিয়োগের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। বিগত সরকারের ১৫ বছরে প্রকল্প থেকে ২৫৭ সহকারী প্রকৌশলীর চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও নিয়মিতকরণ বিষয়ে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৭ মে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা-৩ এর সিনিয়র সহকারী সচিব রমিসা জাহান অ্যাটর্নি জেনারেলকে পাঠানো এক দাপ্তরিক পত্রে এই তথ্য জানান।
প্রসঙ্গত, ‘এলজিইডির নিয়োগবিধি তছনছ’ শিরোনামে দৈনিক গণমাধ্যম পত্রিকায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে আইনজীবী ব্যারিস্টার আরিফ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার উম্মে আইমান জেনিব স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। পরে এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি রাশেদুজ্জামান রাজার দ্বৈত বেঞ্চ প্রকল্প থেকে ২৫৭ জনকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংঘটিত অনিয়মের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলের এই আদেশ দেন।
জানা যায়, আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়) মাহবুব-উল-আলমকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। এলজিইডির একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত এই তদন্ত কমিটি দীর্ঘ ৩ মাসের অধিক সময়ে নথিপত্র পর্যালোচনা করে ৩০ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তদন্ত প্রতিবেদনটি অনুমোদন করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন শাখায় পাঠান। এরপরই তদন্ত প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আইন-৩ শাখার স্মারক উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, এলজিইডির দাখিল করা সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। সংশ্লিষ্ট রিট আবেদনটি বর্তমানে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারিত আছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ১৩১ জন, ২০১১ সালে ১০৯ এবং ২০১৩ সালে ১৭ জনকে প্রকল্প থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে রাজস্ব খাতে পদোন্নতিসহ পদায়ন দেয়। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারের অর্থ বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। অভিযোগ হচ্ছে এসব প্রকৌশলীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এলজিইডির নিয়োগ বিধিমালা ও জনপ্রশাসন বিধি অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসির) সুপারিশ ছাড়াই প্রথম শ্রেণি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাছাড়া তাদের মধ্যে অনেকেরই প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও প্রথম শ্রেণির সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে পেয়েছেন চাকরি। অর্থ বিভাগের মতামত ছাড়া ২৫৭ জনকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া ওই নিয়োগের বিষয়ে দুটি অডিট আপত্তিও রয়েছে।
এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মোহা. শরীফ উদ্দীন স্বাক্ষরিত পত্রে দেখা যায়, এলজিইডিতে সর্বশেষ ২০০৮ সালে জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুমোদন ও প্রণয়ন করা হয়। জনপ্রশাসন বিধিমালা অনুযায়ী, অনুমোদিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুসরণ ছাড়া পদোন্নতির বিধান নেই। অথচ অনুমোদিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা না থাকলেও প্রকল্প থেকে আসা সহকারী প্রকৌশলীদের ৬ষ্ঠ গ্রেডের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৯:০২ ৭০ বার পঠিত