মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

একদিকে যুদ্ধবিরতি অন্যদিকে যুদ্ধ

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » একদিকে যুদ্ধবিরতি অন্যদিকে যুদ্ধ
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫



একদিকে যুদ্ধবিরতি অন্যদিকে যুদ্ধ

একদিকে যুদ্ধবিরতি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি হামলা। এরই মধ্যে তারা হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনে। সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী এক অন্তঃসত্ত্বাসহ তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। পশ্চিমতীরে তাদের অব্যাহত হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫০০০ মানুষ। অন্যদিকে বার বার গাজাকে কিনে নেয়ার এবং নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। গাজাবাসীকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলেছেন। গাজাবাসী যদি তার নিজের ভূখণ্ডেই থাকতে না পারেন, তাহলে কিসের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান! এমন প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন হামাস নেতারা। ডনাল্ড ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার উল্লেখ করে তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের মানসিকতার সঙ্গে একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর মানসিকতা এক হবে না। ওদিকে গাজা সিটির শুজেয়াতে আরও এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। নেটজারিম করিডোর থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী যখন তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে ফিরছিলেন তখন তাদের ওপর হামলা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইসরাইলিরা কমপক্ষে ৪৮,১৮৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। আহত করেছে কমপক্ষে এক লাখ ১১ হাজার ৬৪০ জনকে। তবে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস এই সংখ্যা কমপক্ষে ৬১,৭০৯ বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে, আরও হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তারা মারা গেছেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। গাজায় হামাসের প্রধান খলিল আল হায়া বলেছেন, পশ্চিমা, যুক্তরাষ্ট্রের এবং প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকা নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছেন তা ধ্বংসাত্মক। এর আগেও আমরা যেমনটা করেছি, তেমনি তাদের এই পরিকল্পনাকে আমরা বাতিল করবো। তেহরানে ইরানের বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকীর স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ট্রাম্প গাজা দখল করে নেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন সে বিষয়ে কথা বলেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন। তারা বলেছে, গাজা উপত্যকা কিনে নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে তারা। ট্রাম্পের দাবির পর বিভিন্ন দেশ থেকে কড়া নিন্দা জানানো হয়েছে। তবে রোববারও ট্রাম্প গাজাকে কিনে নিয়ে এর মালিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, আমরা যে ক্ষতিকর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছি সে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আমরা কমপক্ষে ১২ লাখ ফিলিস্তিনির বিষয়ে কথা বলছি। তারা গাজায় বসবাস করেন। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় ইস্যু। তিনি ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এসব মানুষই মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলুশন অনুসরণ করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে সেখানেই। তবে এখনো বিস্তারিত বলা হয়নি। এ জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। ওদিকে গতকাল দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এই বিচার শুরু হয়েছে ২০২০ সালে।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি ক্রিমিনাল মামলা আছে। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিজের দোষ স্বীকার করেননি। প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারাকে নিয়ে একটি নিউজভিত্তিক ওয়েবসাইটে ইতিবাচক রিপোর্ট করার জন্য বেজেক টেলিকম ইসরাইলকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। এই মামলায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও আস্থা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে যে, ইসরাইলি নাগরিক ও হলিউড প্রযোজক আরনন মিলিচ্যান ও অস্ট্রেলিয়ার বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী জেমস প্যাকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী অন্যায়ভাবে দুই লাখ ১০ হাজার ডলার নিয়েছিলেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও আস্থা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইসরাইলের ইয়েদিওথ আহরোনথ পত্রিকার মালিক আরনোন মোজেসের সঙ্গে নেতানিয়াহু একটি চুক্তি করেছিলেন। সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বী পত্রিকাগুলোকে দমিয়ে রেখে আরনোন মোজেকের পত্রিকাকে বেশি সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেন। বিনিময়ে নেতানিয়াহুকে বেশি কাভারেজ দিতে হবে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও আস্থা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৪:১৬:৫৫   ১২১ বার পঠিত