
বার্ড ফ্লু বা এইচ৫এন১ ভাইরাসের বিষয়ে বহু বছর ধরেই সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন ভয়াবহ এই ভাইরাস পাখি থেকে কীভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সেই আশঙ্কার বাস্তবসম্মত চিত্র তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ২৫টি দেশে এইচ৫এন১-এ আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯০ জন। যার মধ্যে ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুহার প্রায় ৪৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১৮ কোটির বেশি পাখি আক্রান্ত হয়েছে। ১৮টি রাজ্যের এক হাজারেরও বেশি ডেইরি খামারে ভাইরাস ছড়িয়েছে এবং অন্তত ৭০ জন মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফিলিপ চেরিয়ান ও গৌতম মেনন ‘বিএমসি পাবলিক হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন- এইচ৫এন১ ভাইরাস যদি মানুষের মধ্যে ছড়াতে শুরু করে, তা কীভাবে ধীরে ধীরে মহামারিতে রূপ নিতে পারে।
গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ‘ভারতসিম’ নামে একটি ওপেন-সোর্স সিমুলেশন প্ল্যাটফর্ম। যা আগে কোভিড-১৯ বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়েছিল। গবেষকদের মতে, বিপদের শুরু হয় একেবারে নীরবে। সংক্রমিত পাখি থেকে একজন মানুষের শরীরে ভাইরাস প্রবেশের মাধ্যমে। কিন্তু আসল বিপদ দেখা দেয় যখন মানুষের মধ্যে স্থায়ী সংক্রমণ শুরু হয়।গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, প্রাথমিক দুই থেকে ১০টি কেস শনাক্ত হওয়ার মধ্যেই হস্তক্ষেপ না করলে সংক্রমণ দ্রুত প্রাথমিক ও গৌণ সংস্পর্শের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র দুইজন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন করা গেলে প্রাদুর্ভাব প্রায় নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু ১০টি কেস শনাক্ত হয়ে গেলে বুঝতে হবে ইতিমধ্যেই তা সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তখন আর প্রাথমিক ব্যবস্থায় কাজ হয় না।
গবেষণার জন্য তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলার একটি গ্রামকে মডেল হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি ভারতের অন্যতম বড় পোলট্রি অঞ্চল। যেখানে হাজারের বেশি খামার ও কোটি কোটি মুরগি রয়েছে। কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি গ্রামে পরিবার, কর্মস্থল, বাজার ও স্কুলের নেটওয়ার্ক ধরে সংক্রমণের বিস্তার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পাখি নিধন কার্যকর হলেও তা মানুষের মধ্যে সংক্রমণের আগেই করতে হবে। একবার মানুষে সংক্রমণ শুরু হলে, দ্রুত আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনই একমাত্র কার্যকর উপায়। সংক্রমণ যদি তৃতীয় স্তরে- অর্থাৎ সংবেদনশীল স্তরে পৌঁছে যায়, তাহলে কঠোর লকডাউন ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন।তবে গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এটি একটি মাত্র গ্রামের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট সীমা লাকদাওয়ালা বলেন, সব ফ্লু ভাইরাস সমানভাবে সংক্রামক নয় এবং সব আক্রান্ত ব্যক্তি সমানভাবে ভাইরাস ছড়ান না। তার মতে, এইচ৫এন১ যদি মানুষের মধ্যে সনাক্ত হয়, তবে তা কোভিড-১৯-এর চেয়ে ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু মহামারির মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তবে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও তিনি সতর্ক করে বলেন, ভাইরাসটি অন্য ফ্লু স্ট্রেনের সঙ্গে মিশে গেলে ভবিষ্যতে মৌসুমি ফ্লু আরও অনিয়ন্ত্রিত ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। গবেষকদের মতে, বাস্তব সময়ে তথ্য যুক্ত করে এ ধরনের সিমুলেশন চালানো গেলে প্রাদুর্ভাবের একেবারে শুরুর মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৭:০৮ ১১ বার পঠিত