![]()
পদত্যাগ করেছেন বিবিসির ডিরেক্টর জেনারেল টিম ডেভি এবং নিউজ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেস। কিন্তু কেন? এ নিয়ে বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে খোদ বিবিসি। সংমাধ্যমটি বলছে, বিবিসির প্যানোরামা ডকুমেন্টারি ‘ট্রাম্প: আ সেকেন্ড চান্স?’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। ডকুমেন্টারিটি শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর প্রচার করা হয়। সেখানে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তৃতার অংশ সম্পাদনা করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন ক্যাপিটল হিলে হামলার মূল উস্কানিদাতা ছিলেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। এছাড়া বিবিসি অ্যারাবিকে ইসরাইল-গাজা সংঘাতের কাভারেজ নিয়েও নানা সমালোচনা রয়েছে। বিবিসির ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ একটি নথিতে এসব বিষয় প্রকাশ পেয়ে গেছে।
কে এই টিম ডেভি এবং ডেবোরা টার্নেস:টিম ডেভি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিবিসির ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। তার বেতন ছিল সাড়ে পাঁচ লাখ পাউন্ড। তিনি বিবিসির বিভিন্ন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে ডেবোরা টার্নেস ২০২২ সালে বিবিসি নিউজের সিইও হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার বেতন ছিল প্রায় সাড়ে চার লাখ পাউন্ট। তার অধীনে ছিলেন প্রায় ছয় হাজার সংবাদকর্মী। যারা বিশ্বব্যাপী ৪০টির বেশি ভাষায় প্রতিনিয়ত খবর প্রচার করতেন।
যেই ডকুমেন্টারি নিয়ে অভিযোগ:টিম ডেভি এবং ডেবোরা টার্নেসের পদত্যাগের পেছনে প্রধান কারণ ছিল প্যানোরামার ট্রাম্প ডকুমেন্টারিটি। এই ডকুমেন্টারিটিতে অভিযোগ করা হয়, ট্রাম্পের বক্তৃতার কিছু অংশ সম্পাদনা করে একত্রিত করা হয়েছিল, যা দেখে মনে হয়েছে তিনি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য উসকানি দাতা ছিলেন। ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে বলেন, আমরা ক্যাপিটলে যাব এবং আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের উৎসাহিত করব। কিন্তু প্যানোরামার সংস্করণে তাকে বলতে শোনা যায়, আমরা ক্যাপিটলে যাব… এবং আমি সেখানে তোমাদের সঙ্গে থাকব। আমরা লড়ব। আমরা চরম লড়াই করব। এটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে যে ট্রাম্পকে ক্যাপিটল হিল হামলার মূল উসকানিদাতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যদিও প্রকৃত বক্তৃতার মধ্যে এই দুটি অংশ ৫০ মিনিটেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে ছিল। এ বিষয়ে বিবিসির অভ্যন্তরীণ একটি মেমোতে বলা হয়েছে, প্যানোরামার এই বিকৃত উপস্থাপনা দর্শকদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে এবং বিবিসির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
বিবিসি অ্যারাবিক এবং ট্রান্স ইস্যুতে অভিযোগ:বিবিসি অ্যারাবিকের ইসরাইল-গাজা যুদ্ধের কভারেজ নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ট্রান্স ইস্যু নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এক অভিযোগে বলা হয়, বিবিসি বিশেষজ্ঞ এলজিবিটি প্রতিবেদকদের মাধ্যমে ট্রান্স বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেয় এবং তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া এ বছরের মার্চে বিবিসি নিউজ চ্যানেলের উপস্থাপক মার্টিন ক্রক্সাল যখন ‘গর্ভবতী’ শব্দের পরিবর্তে ‘নারীরা’ ব্যবহার করেন। যা নিয়ে ২০টি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ গৃহীত হয়েছে।
পদত্যাগের পর ডেভি এবং টার্নেসের বক্তব্য:টিম ডেভি পদত্যাগের সময় প্যানোরামা ডকুমেন্টারির কথা উল্লেখ না করে বলেন, যদিও এটি একমাত্র কারণ নয় তবে বিবিসি নিউজ নিয়ে বর্তমান বিতর্কটির জন্য আমার সিদ্ধান্ত দায়ী। সামগ্রীকভাবে বিবিসি ভালো করছে। কিন্তু কিছু ভুলও হয়েছে। ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে এর দায় আমার ওপরই বর্তায়। ডেবোরা টার্নেস তার পদত্যাগের পর বলেন, প্যানোরামা ডকুমেন্টারিটি নিয়ে চলমান বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে এটি বিবিসির ক্ষতি করছে। যা এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাকে আমি ভালোবাসি। তিনি আরও বলেন, যদিও কিছু ভুল হয়েছে, আমি স্পষ্ট করতে চাই যে বিবিসি নিউজের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আনা অভিযোগগুলো প্রতিষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্বের নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৭:৩৩ ৬ বার পঠিত