
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফেরানোর জন্য ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত এ ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনোরকম ‘অ্যাপ্রোচ’ করা যায় কি না, সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য অচিরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের প্রত্যর্পণের জন্য (ভারতের কাছে) চিঠি দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু তারা এখন সাজাপ্রাপ্ত, কাজেই সরকার মনে করে ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ভারত যেন প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করে, সেটি স্মরণ করিয়ে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনোরকম অ্যাপ্রোচ করতে পারেন কি না, সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য অচিরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন। তার সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে। আর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে অন্য আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।
রায়ের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। দীর্ঘদিন সংগ্রাম করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাওয়া গিয়েছিল। এটি ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কয়েকটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখা গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হতো। এটা স্বাভাবিক মনে হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে রায় দিয়ে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর এর সুযোগ নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে বাতিল করে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রথমে পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হয়েছে মাস দুয়েক আগে এক রায়ে। আর সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছিলেন, সেটা আজ বাতিল হয়েছে। উপদেষ্টা আরও বলেন, এ মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে বলতে পারি। কিন্তু এটা কার্যকর হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে। কারণ সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়। এখন সংসদের অস্তিত্ব নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক-আগামীতে যে সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদ যখন ভেঙে যাবে, তারপর ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।
গণভোট করার জন্য আইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের বিষয়ে অধ্যাদেশ সরকার দ্রুত করতে যাচ্ছে। আগামী তিন-চার কার্যদিবসের মধ্যে এটি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া রায় পুরোটাই বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর ও এ-সংক্রান্ত রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সম্পর্কিত বিধানাবলি এ রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি ভবিষ্যৎ প্রয়োগ যোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে বলে রায়ে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৩:৪৭ ৪০ বার পঠিত