তিন সাংবাদিককে জামায়াত আইনজীবীর হেনস্তা, কারাগারে পাঠাতে চাইলেন বিচারক

প্রথম পাতা » জেলা জজ কোর্ট » তিন সাংবাদিককে জামায়াত আইনজীবীর হেনস্তা, কারাগারে পাঠাতে চাইলেন বিচারক
বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫



তিন সাংবাদিককে জামায়াত আইনজীবীর হেনস্তা, কারাগারে পাঠাতে চাইলেন বিচারক

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আদালতপাড়ায় জামায়াতপন্থী কয়েকজন আইনজীবীর হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিন সাংবাদিক। পরবর্তীতে ওই তিন সাংবাদিককে কাঠগড়ায় ডেকে নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন।

কিছুক্ষণ পর ক্ষমা চাওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিআরইউ) প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বুধবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে।

ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা আদালতে হাজির হন। আদালতে হাজির হন ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা। পরে আদালত থেকে আসামি বুশরা আদালত থেকে বের হন।

তখন আসামির ভিডিও ফুটেজ নিতে যান কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম। তবে জামায়াতপন্থী আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ( জামাত প্যানেল) রেজাউল হক রিয়াজ ও হাতিরঝিল থানার জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ অনেকেই ভিডিও করতে বাধা দেয়।

সাংবাদিকরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে তারা আরও চড়াও হন। এসময় তারা সাংবাদিকদের বিচারকের কাছে ধরে নিয়ে যেতে উদ্ধৃত হন।

তবে সাংবাদিকেরা জানান, আসামির ছবি বা ভিডিও নিতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এই কথা বলায় উপস্থিত আইনজীবীরা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের সামনে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন।

এসময় এই মামলার বাদী নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন তিনি। বাদীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন।

এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস তার আদালতে এই তিন সাংবাদিককে এজলাসে ডেকে নেন। এসময় আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ কৌশলে পালিয়ে যান। তখন বিচারক তিন সাংবাদিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

বিচারক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের পরিচয় দেন। সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বিচারক বলেন, আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন ১১ টা ৩৮ বাজে, আপনারাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আর কোন কথা হবে না। আপনাদের সকলের মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক।

মিনিট দুইয়েক পর বিচারক বলেন, আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দিব। নাহলে কারাগারে যেতে হবে। কোন ছাড় নেই। পরে এই তিন সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত।

সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, সংবাদ সংগ্রহে গেছিলাম। কিন্তু কয়েকজন আইনজীবী ভিডিও তুলতে বাধা দিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে আমাদের তিনজনকে কাঠগড়ায় ডাকেন। আমাদের পরিচয় জেনে বিচারক বলেন, আপনারা বসেন। সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা আসামির ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের আইনজীবীরা চড়াও হন। একজনের মোবাইল কেড়ে নেন। ভিডিও ধারণ করায় বিচারকের কাছে জোর করে তারা আমাদের নিতে চেয়েছে। আমরা যেতে না চাওয়ায় তারা খুব খারাপ আচারণ করতে থাকেন। এসময় আরেক আদালতের বিচারক আমাদেরকে এজলাসে ডাকেন। এরপর কাঠগড়ায় যেতে বলেন। বিচারক কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কোন অপরাধ না করেই নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া লেগেছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম বলেন, একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিচারক ডেকে সমাধান করে দিয়েছেন।

আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লিটন মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল্লা পিয়াসের আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোর্টে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় অথবা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন কোন অপেশাদার আচরণ করেননি। সাংবাদিকগণ শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে জামায়াতের আইনজীবীদের দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হন সাংবাদিকরা। এসময় ওই সব আইনজীবীদের হট্টগোলে আদালতে পরিবেশ নষ্ট হয়। যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এসব বিবেচানায় না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে হাসিবুল্লা পিয়াস উল্টো তিন সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। একজন বিচারকের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি ওই বিচারকের অপসারণ সহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।

বাংলাদেশ সময়: ১:২৪:২৯   ৫০ বার পঠিত  




জেলা জজ কোর্ট’র আরও খবর


সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের এপিএস মনিরের দুই নৌযান জব্দ
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক এমডি ফিরোজ গ্রেফতার
স্ত্রী-কন্যাসহ র‍্যাবের সাবেক ডিজি হারুনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
৯০তম বারের মতো পেছালো রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময়সীমা
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা বাঁধনসহ ৭ জন রিমান্ডে
ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর মামলা তদন্তের নির্দেশ
রিজার্ভ চুরি মামলার প্রতিবেদন দাখিল ৮ ডিসেম্বর
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
শ ম রেজাউল করিম ও তার স্ত্রীর আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ
৫ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই: ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও গভর্নরকে আদালতে তলব

Law News24.com News Archive

আর্কাইভ